Friday, December 26, 2014

আরও কিছু রোম্যান্টিকতা

অনেকেই আমার রোম্যান্টিক কবিতার উৎস বা কারন খোঁজার চেষ্টা করেন।  আমি অনেকদিন থেকেই লিখি।  কবিতা লেখা এবং আবৃত্তি করা আমার খুবই প্রিয় -  শুধু এতদিন প্রকাশ করিনি।  আমার মনে যখন যেটা আসে, লিখি।  এর পেছনে উৎস/কারন খোঁজা আর বেহুদা সময় নষ্ট করা একই কথা :)  আর আমার সাম্প্রতিক বেশভূষার পরিবর্তনেও অনেকে ভুরু কুঁচকে কারন বের করার চেষ্টা করছেন।  আমার মা, আমার বড় ভাই এবং আমার ভাবী - এই তিনজনের এর পেছনে অবদান আছে।  অনেক দিন থেকেই তাদের ভেতর চাপা একটা অভিমান আছে আমার প্রতি - আমি কেন এত উরাধুরা চলি।  সেটা দূর করার চেষ্টা চলছে।  ভার্সিটি সংক্রান্ত আরেকটা কারন আছে এর পেছনে যেটা আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কলিগ ছাড়া আর কেও জানেনা - জানার দরকারও নাই।  যাই হউক - আবারও দুইখান রোম্যান্টিক কবিতা - 

"আমি শ্রাবণের বিরামহীন  বৃষ্টির মত
নিরন্তর ভালবেসে যাব
দ্বিধাহীন, ক্লান্তিহীন, অভিযোগ অনুযোগহীন
বুকের ভেতর দৈনিক ডানা ঝাঁপটাবে
অস্থির প্রজাপতি
হঠাৎ হঠাৎ, কণ্ঠনালীর চারপাশে
চেপে বসবে যন্ত্রণার নীলাভ শেকল
আমি তবু বুকভরে নিঃশ্বাস নেব অস্তিত্ব তোমার
অসীম কালের অতি ক্ষুদ্র যে অংশ
আমি ধারণ করে আছি
সে জীবন ভালবেসে গলে ক্ষয়ে যাক!
আমি তবু ক্ষান্ত দেবনা!
দেখিনা - তোমার কত আছে প্রতিরোধ!"

-----------------------------------

"শুনেন ম্যাডাম -
এতটুকু আনুরাগও ছিলনা আমার
এ কথা ও কথার ছলে
বেঁধেছেন কঠিন জালে।
চারদিকে সুদৃঢ় দেয়াল তুলে
ভালই ছিলেম নিরালা।
গভীর চোখের বাণে
ধরালেন গভীর ফাটল
প্রতিরোধে আমার
এখন আমার নির্ঘুম রাত
আপনি কাটাবেন স্বপ্নিল -
এ কেমন কথা!
আমার অস্থির মুহূর্তগুলোয়
আপনি বুঁদ হবেন খিলখিল হাসিতে -
মেনে নিতে পারবোনা, কিছুতেই!"

Monday, December 15, 2014

ক্ষুদ্র ভূখণ্ড আমার

আমি মানুষ ভালবাসি!  বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষদেরএকটু বেশিই ভালবাসি!  এই ভালবাসা আমাকে নিদারুনভাবে আটকে ফেলেছে - যে বন্ধন ছেড়ে আমার পক্ষে আর কোথাও যাওয়া সম্ভব না।  এই কারনেই এক সময় আমার জীবন নিঃসঙ্গ হবে বলে মনে হয়!  জীবনের অনেক বেহুদা কষ্টেরও আমি মানে খুঁজে ব্যর্থ হই প্রতিদিন!

"ভেবেছিলাম -
নির্ভেজাল হেঁটে যাব
আপন সূর্যাস্তের দিকে
সরলরেখার মত পথ ধরে নিপালিশ।
ভেবেছিলাম -
বৃষ্টিতে ভেজা দোলনচাঁপা
সহজ সরল, মেটাবে জীবনের সব চাওয়া পাওয়া
স্রষ্টার পরিকল্পনাতে
মনে হয় আছে ভিন্ন আভাস!
পায়ের পাতা ফুঁড়ে শেকর গিয়েছে বসে
এ মাটির গভীরে।
আমি হিবিজিবি, নিয়ম নীতিহীন এই ভূখণ্ড ছেড়ে
যেতে আর পারবোনা কোথাও।
বিশ্ব মানচিত্রের এতটুকু ক্ষুদ্র যে স্থান
কি এক কঠিন বাঁধনে সে বেঁধেছে আমায়! 
নিদারুন এই উপলব্ধি
বারে বারে বলে - "ওরে পাগল! এখনো বুঝিস না?
জীবনের গোধূলি হবে নিঃসঙ্গ যে তোর।"
ক্ষুদ্র এই জীবনের সাথে
বড় বড় কষ্টের গাণিতিক যোগাযোগ
কিছুতেই বোঝা যায় না "

Thursday, December 11, 2014

প্রার্থনা

স্রষ্টার প্ল্যান আসলে বুঝা যায় না।  জীবনের কিছু কিছু সময় ভুল করে অভিমান হয়ে যায় -  "কেন?" প্রশ্নটা অযাচিত করে ফেলি।  স্রষ্টা আমাকে ক্ষমা করুন! 
---------------------------
"স্রষ্টা আমার -
ভীষণ যে ভালবাসি, সেই অধিকারে
আমি ভুলেভালে
আপন অবস্থান ভুলে
করেছি অভিমান!
ক্ষমা কি করবে না আমায়?
ফিরাবে কি তোমার মুখ
অধমের থেকে?
ভোরের নিঃসঙ্গ কান্নার উপহার
নেবেনা তুমি?
কি এমন হবে ক্ষতি
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের, কি হবে ক্ষতি
খুদ্র আমাকে দিলে
বেকসুর খালাস?
জীবনের না মেলা হিসেবগুলো
মিলিয়ে দিলে, কি হবে এমন?
ক্ষমা করে দেবেনা সব ভুল অনুভব?
তোমার নাতিশীতোষ্ণ ছায়ায়
হেঁটে যাব জীবনের শেষ সীমানায়।
দেবেনা সুযোগ? "

Wednesday, December 3, 2014

আশরাফ ফারুক - আমার কলিগ।  মানুষের জন্য ভালবাসা এবং বৈষম্যের প্রতি ঘৃণা - তার ভেতর দুইটাই প্রবল।  আমি আশা করব সে আজীবন নম্রতা অবলম্বন করে মানুষকে ভালবেসে যাবে।  আমি তার ভেতরের নিরপেক্ষতাকে (যা অধিকাংশ মানুষের ভেতর নেই) শ্রদ্ধা করি।  তার জন্য -

"কিশোর রিকশাওয়ালার
ঘর্মাক্ত পিঠের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে
পুরো রাস্তা ভীষণ জ্বলেছে আমার দুই চোখ
তার বাষ্পীভূত ঘাম যেন ভেসে ভেসে
আমার চোখের ভেতর
অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি হয়ে গেড়েছে আবাস!
অজস্র শিশু শ্রমিকের না খেলা বিকেলগুলো
আমার শান্তিতে, স্বস্তিতে বাঁধ সেধে
নাছোড়বান্দার মত লেগে থাকে পিছে -
প্রতিদিন।
শীতের কনকনে রাতে
ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষের
নগ্ন পায়ের দিকে তাকিয়ে
নিদারুণ যন্ত্রণা মাথার ভেতর!
কিছু ভালো লাগেনা আমার, কিছুই না!
সব ভেঙ্গে ফেলবার ইচ্ছা পূরণে ব্যর্থ
আমার অকেজো দু'হাত!
বাংলাদেশ!
তুমি আর মায়াহীন মরুভুমি না হয়ে
কবে হবে মরুদ্যেন -
আমার বোনের জন্যে,
আমার ভাইয়ের জন্যে,
আমার সন্তানের জন্যে,
আমার ভালবাসার জন্যে?
"

Thursday, November 27, 2014

সামান্য রোমান্টিকতা

আমার ছাত্র সাযযাদুর রহমানের প্রেমে পড়ার বাতিক আছে - প্রেমে না পরলে তার ঘুম হয় না মনে হয়।  প্রায়শ এফবি তে মন বিষয়ক পোস্ট দেয় সে, হাহুতাশ করে, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।  আরেকজন, আহমেদ যবায়ের - তার প্রেমে পড়ার বাতিক আছে কিনা জানিনা, তবে প্রেমের কবিতা লেখে অনেক।  তাদের দুজনের জন্য ( তাদেরকে উদ্দেশ্য করে নয় :) ) এবং ওয়াসি'র অনুরধ রক্ষার্থে দুটা রোম্যান্টিক কবিতা দিলাম -
-------------------------------------------
"হঠাৎ ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি
রেশমি চুলের উথাল পাথাল ঢেউ
ভীষণ, ভীষণ ইচ্ছে হল
হাত ভেজাতে, কাছে যেতে
ভীষণ, ভীষণ ইচ্ছে হল
গভীর চোখে দুচোখ রেখে
মনের গহন বুঝে নিতে
সাধ আর সাধ্যের মিলন
এ জীবনে হয় কদাচিৎ
সামান্য এইটুকু দূরত্ব পেরনোর সামর্থ্য আমার
জানি হবেনা কোনদিন"

-----------------------

"তুমি রোদেলা দুপুর হয়েও
কি করে যে বর্ষা নামাও বুকের ভেতর
খোদাই মালুম

বসন্তের মৃদুলা বাতাস হয়েও
কি করে যে তোল কাল বৈশাখীর ঝড়
এই অস্তিত্ব জুড়ে
আমি ভেবে পাই না

শুধু জানি, আমার মানবিক দুর্বলতার
তুমি এক নিরন্তর সাক্ষী হয়ে
আমাকে জ্বালাবে প্রতিদিন"
------------------------

Tuesday, November 25, 2014

আশা

মইন হসেইন প্রিন্স সহ আরও শত সহস্র তরুন, যারা অন্যের ভালর জন্য জীবনের অনেক খানি সময় ব্যয় করে, বিপদে মানুষের পাশে এসে দাড়ায় তাদের জন্য আমার এই ছোট্ট কবিতা।  তারা আছে বলেই রানা প্লাজা, তাজ্রিন গারমেন্ত, তোবার শ্রমিকদের বন্ধু আছে, আশ্রয় আছে - যে আশ্রয় সরকার বা আমার মত মানুষেরা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।  তবে প্রিন্সদের মনে রাখতে হবে - যে বনে বাস করে হায়েনাদের সাথে যুদ্ধ তারা করবে, সে বনে তাদের সুরক্ষিত আশ্রয়ও দরকার হবে, দরকার হবে অস্ত্রের - শিক্ষা এমনই একটি অস্ত্র ------

"যুবক থমকে থেমে দাঁড়াল
কিছুটা দ্বিধান্নিত
অস্তিত্ত বিপন্ন করবে কিনা ভেবে বোধ হয়
কিছুটা হিসেব নিকেশ চলল খানিকক্ষণ
আমি স্থির হয়ে দেখছি
অন্যায় দেখে দেখে অভ্যস্ত এই চোখে
হঠাৎ চিৎকার - "থামান এইসব - এটা অন্যায়!"
তাকিয়ে দেখি যুবকের মুষ্টিবদ্ধ হাত
পরম মমতার জমিতে বর্ধিত সাহসে
রুখে দাঁড়ানো এই যুবককে দেখে
আমি বুঝে নিলাম - আশাহত হবার কিছু নেই
আজ হোক, কাল হোক, পরিবর্তন আসবেই জোলোচ্ছাসের  মত
সমস্ত দরোজা খুলে দিয়ে
নিশ্চিন্তে আজ রাতে ঘুমাব আমি
এক দশকের ক্লান্তি আমার, চোখের সীমানা ঘিরে! "

--তোমাদের রায়হান, তোমাদের ভালবেসে


Saturday, May 31, 2014

র‍্যাব, মানবতা এবং বাংলাদেশ - লিফট এ একদিন

হাসপাতালের লিফট এ উঠার নিয়ম হোলো যে ডাক্তার এবং নার্সরা আগে উঠবেন।  এটা স্বাভাবিক - কারণ তারা হাসপাতালটাকে চালাচ্ছেন।  আমাদের ভার্সিটি তে নিয়ম হল শিক্ষক এবং স্টাফ (যাদের সারাদিন উপর/নিচ করতে হয়) আগে উঠতে পারবেন।  আমি কিছু  বেক্তিগত কারনে এ সুবিধাটা নেই না।  একটা কারন হল - নিয়ম মানতে শেখান।  আমি যদি শিক্ষক হয়ে লাইনে দাড়াই, তবে আমার ছাত্র/ছাত্রিরা অনুপ্রানিত হবে নিয়ম মেনে চলতে।  তাই আমি আমার ছাত্রদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে লিফট এ উঠি।

সেজন্যই যখন কোনও ছাত্র/ছাত্রি উপর থেকে লিফট দখল করে উঠে, আর আমার অন্য ছাত্র/ছাত্রিরা কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে লিফট এ উঠতে না পারে, তখন খুব মেজাজ চড়ে যায়।  এমন ঘটনা প্রায় সময় ঘটে - কিন্তু আমি ছাত্রদের ভুল টা ধরিয়ে দিলে তারা মেনে নিয়ে লিফট থেকে নেমে লাইনে দাড়ায়।  কিন্তু কিছু কিছু বেতিক্রম না থাকলে ত জীবন নীরস হয়ে যায় :)
এমনই এক বেতিক্রমি ছাত্রকে তার ভুল টা ধরিয়ে দিয়েছিলাম।  ভুল স্বীকার ত দূরে থাক, সে আমাকে ইংরেজিতে বিশাল এক লেকচার দিল।  তার কথার মুল অংশগুলো নিচে তুলে ধরলাম -
১।  "আমি এখানে টাকা দিয়ে পড়ি" - মানে হল তার কোনও নিয়ম মানার, বা কাওকে শ্রদ্ধা করার কোনও প্রয়োজন নেই।
২। "আমি একজন র‍্যাব অফিসার" - সে আমাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিল।  বাংলাদেশের পরিস্থিতি সে আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
৩। "আমি মানবতা কেন দেখাব?"
আমার মন খুব খারাপ হয়েছিল সেদিন।  সে আসলেই বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।  র‍্যাব কি এখন গল্পের সেইসব দইত্য/দানব নয় যাদের ভয় দেখিয়ে বাবা/মা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ান?  এমনই কি দেখা যাচ্ছে না সাম্প্রতিক গুম/খুন/ক্রস ফায়ার এসব দেখে?  আর মানবতা কি আসলেই আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে না আমাদের মনন থেকে?  তিন বছরের বাচ্চার কিডনি দুটো কেটে নিয়ে আমরাই ত তার লাশ ফেলে রেখে যাই রাস্তায়।  আমরাই ত গুলি করে পুড়িয়ে মানুষ মারছি!
 
খুব অস্থির লাগছে।  ক্রমাগত বুঝতে পারছি, ভাল মানুষদের ঐক্য কি পরিমান প্রয়োজন এখানে!
 
কোথাও যদি গুতিকতক ভাল লোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনও কাজ করা শুরু করে, তবে তাদেরকে ঠেকানোর কেও থাকবে না।  স্রষ্টার সাহায্য সেখানে থাকবেই।  আমাদের মুল সমস্যা হল - আমরা যারা সাধারন মানুষ, সহজ সরল এবং সৎ জীবন যাপন করে যেতে চাই, তাদের ভেতর কোনও ঐক্য নেই, আর যখনই কোনও ঐক্য তৈরি হয় তাও হয় ক্ষণস্থায়ী।  এখনি সময় স্থায়ী ঐক্যের!  কদিন পর, পচন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছুবে যা চিকিৎসা করে সারান যাবেনা।  আমাদেরই লাশ ভাসতে থাকবে শীতলক্ষ্যায়, আমাদের গলিত দেহ পরে থাকবে রাস্তার পাশে, জেলের জালে ধরা পড়বে আমদের বিচ্ছিন্ন মস্তক!  আমরা কবে জেগে উঠবো? 

বিঃদ্রঃ আমার ছাত্র/ছাত্রিরা - তোমাদের কাছে ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ তোমাদের ভালবাসার জন্য এবং তোমাদের সংযমের জন্য।  এই ঘটনার পর প্রচণ্ড রেগে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের সংজত করেছ তোমরা।  আল্লাহ তোমাদের ভাল রাখুক, ন্যায় প্রথিস্থার, উপকারী পরিবর্তনের সহায়ক/অগ্রদুত হিসেবে তোমাদের ঐক্যবদ্ধ করে দিক!

Monday, January 27, 2014

আমরা সাধারন মানুষেরা

অনেক কষ্টের এই লেখা।  কারো কারো কাছে মনে হবে ভণ্ডামি, কারো কাছে ভাব, কারো কাছে নিছক ছেলেমানুষি - কিছু আসে যায় না।  যে আমাকে যে খোলসে দেখতে চায়, সেই খোলস পরতে না পারার
কারনে অনেক ধরনের নাম কামিয়েছি - কারো কাছে আমি মুনাফিক, কারো কাছে রাজাকাড়, আরও কত কি।  আমার কিছু আসে যায় না - আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে কিছু আশা করিনা।
যাই হউক - সরকারি এক অফিসে গিয়েছিলাম কিছু পাওনা পরিশোধ করতে।  যে কোনও সরকারি অফিস গেলে আমার অস্বাস্তি লাগে খুব - অনেক পিওন থেকে শুরু করে অনেক অফিসার কেমন হুম্রি খেয়ে পরে - মক্কেল পাওয়া গেছে টাকা খাওয়ার।  এই অফিস বেতিক্রম নয়। 
দুই চারজন ডিঙ্গিয়ে গেলাম যার কাছে টাকা দিতে হবে তার কাছে।  তিনি অনেক হিসাব কিতাব করে বললেন, "আপনার যে টাকা আসে তার থেকে আমি কমায় দিলাম ২০০০, আপনে অর্ধেক নিয়েন আর আমারে অর্ধেক দিয়েন।" মন খারাপ হয়ে গেল খুব - একবার ইচ্ছা হোল বলি, "টাকা কি আপনার বাবার যে আমাকে বাচায় দিবেন?" মুখে, খুব ভদ্রতার সাথে বললাম, "ভাই, রাগ করবেন না, আমি পুরা টাকাটাই দিতে চাই,  আর আপনাকে এমনিতেই শ দুয়েক টাকা দিয়ে দিবনে।"  তিনি সেটাতে রাজি নন।  বললেন, "ভাই আপনে ভয় পান কেন?  কোন ভেজাল হইব না।"  আমি আবারও বলার চেষ্টা করলাম যে আমি পুরাটাই দিতে চাই, তিনি আমার কথায় কান না দিয়ে রিসিট কেটে ফেললেন - বুঝলাম বেশি জোর করলে একটা বিপদে ফেলে দিবে, যে বিপদের সাথে সংগ্রাম করার শক্তিসামর্থ্য আমার নেই এখন।  মেনে নিয়ে চলে এলাম!
সারা রাস্তা আমি মাথা নিচু করে বাসায় এসেছি।  আমি যে কখনো ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য হইনি আগে, তা নয়।  কিন্তু এ পরিস্থিতি ভিন্ন অনেক!  আমার মনে হোল আমি দেশটাকে ঠকালাম, তার পাওনা থেকে তাকে বঞ্চিত করলাম, আমি লুটেরা!  আমার বুক চিন চিন করছিল!  ঘেন্না লাগছিল - আমি ঠকিয়েছি। আল্লাহর কাছে মাফ চাইলাম, ঠিক করলাম যে টাকা বেঁচেছে তা আমি দরিদ্র কাওকে দিয়ে দেব। তবু কষ্টটা যায়নি।  বাসায় ভাই বোন কেও ছিলনা, বউ ও না - ইচ্ছা হচ্ছিল তাদের কাওকে ধরে হাওমাও করে কাঁদি!  ইচ্ছে ছিল কাজের জায়গায় কারো সাথে শেয়ার করব কষ্টের কথাটা - কিন্তু সে সুযোগও নিয়ে নেয়া হয়েছে আমার কাছ থেকে!
আমি এখন সবাইকে এই কষ্টের কথাটা বলছি - কারন আছে।  একটা দেশ, একটা জনগোষ্ঠী এভাবে চলতে পারেনা!
এ দেশ সত্যিকার অর্থেই লুটেরাদের হাতে! এ দেশে আমাদের সত্তিকার অর্থেই কোন স্বাধীনতা নেই!  এ দেশে কোন ন্যায় বিচার বলে কিছু নেই!  আমি মানুষকে সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে দেখি - ভিত সন্ত্রস্ত তারা!
 এখানে কোন পুলিশ আমাকে ধরে চড় থাপর মারলে আমার কিছু করার থাকবে না অপমানিত হউয়া ছাড়া।  আমাকে কেও গুম করে ফেললে আমার পরিবার শুধু কাঁদতেই পারবে!  ফুটপাতে হোন্ডা উঠিয়ে দেয়া যুবককে আমরা কিছু বলতে পারিনা ভয়ে - পাছে সে কোন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হয়!  আমাদের বাসে কে কখন বোমা মেরে বসে কে জানে!  আমাদের এখানে ৯ বছরের একটি শিশু ভোর বেলা টিফিন হাতে কাজে যায়, স্কুলে নয় - যখন আমার সন্তানরা বিকেলে খেলাধুলা করে, তখন সে কারো গাড়ি ঠিক করে, বা কোন রেস্টুরেন্ট এ ধুয়ামুছার কাজ করে!  এখানে এক বৃদ্ধার জমি দখল করে ফেলে প্রভাবশালী কোন বেক্তি - কোন বিচার হয় না!  এখানে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, বইঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হয় রাজনীতির নামে!  এখানে মসজিদ থেকে গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গা বাধান হয়, এখানে মালোপাড়ার নিরস্ত্র মানুষের জীবন তছনছ করা হয় ধর্মের নামে!  এখানে জঙ্গি দমনের নামে নিরীহ দরিদ্র একজন ধর্ম শিক্ষকের আরবি শিখানর পাঠশালা বন্ধ করে দেয়া হয়!  এখানে জামাত কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানে অত্যাচার করা হয় তাদের পরিবারের নারি/শিশুদের।  এখানে নদী দখল/বন দখল সবই চলে বিনা বাঁধায়!  পদ্মা সেতু হয়ে যায় নিছক স্বপ্ন!  এখানে অবরোধের নামে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয় এক
দশক!
আমাকে কি আরও ফিরিস্তি দিতে হবে???
সব বভক্তি ভুলে, আমাদের সাধারন মানুষদের এই ঐক্যমতে এখনি পৌঁছুতে হবে - একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না, একটি জনগোষ্ঠীর জীবন এমন হতে পারে না!  আমি কোন লুটেরা রাজনিতিবিদকে বলছি না, আমি কোন অসৎ ব্যবসায়িকে বলছি না, বলছি না দলিয়/বেক্তিগত সঙ্কীর্ণতার ওর্ধে উঠতে অক্ষম বুদ্ধিজিবিদের, বলছি না সেসব পেশাজিবিদের যারা রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে অর্থ এবং যশ কামাচ্ছেন দেদারসে!  আমি বলছি খেটে খাওয়া সাধারন মানুষদের, আমার বাসের সহযাত্রীদের - মত, ধর্ম ভুলে গিয়ে আমাদের ঐক্যমতে পৌঁছুতেই হবে এবং কাজে হাত দিতে হবে এই সমাজ ঠিক করার।
আমি হতে পারি একজন ইসলামপন্থী, আপনি সমাজতন্ত্রি, আমি হতে পারি রক্ষণশীল, আপনি উদারপন্থি, আমি হতে পারি মুসলমান, আপনি হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা নাস্তিক - এসব ভুলে যেয়ে দেশ ঠিক করার, আমাদের জীবন ফিরিয়ে নেবার কাজে ঐক্যবদ্ধ হউয়া একান্ত জরুরি হয়ে পরেছে।  পরে অনেক সময়য় পাওয়া যাবে তাত্তিক বিতর্কের, আদর্শভিত্তিক রাজনীতির।  এখন নয়! 
আমার অনেক সজনেরা/বন্ধুরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে ধিরে ধিরে, আমাকেও চাপ দেয়া হচ্ছে - কিন্তু আমি যেতে চাই না!  আর কিছু না পারি, এখানে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করে কান ঝালাপালা করে দেব!  হারামিপনার একটা সীমা থাকা উচিৎ!