Friday, December 4, 2015

মুতের ঝিল

রঞ্জন, নুরুযযামান আর আমি ভার্সিটি থেকে ফিরছি রিকশায়।  হাতিরঝিলের কাছে এসেই দমবন্ধ হবার জোগাড় হল প্রস্রাবের গন্ধে!  রাগের মাথায় নুরুযযামান বলে উঠল - "এইডা হাতিরঝিল না, এইডা মুতেরঝিল!"  হাসতে হাসতে পেট ব্যথা!
ওদের ছেড়ে দিয়ে বাসায় আসতে আসতে ভাবলাম - জাতিগত ভাবেই আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে।  যত্রতত্র মুত্রত্যগ করার একটা বদ অভ্যাস আমাদের আছে।  আর ঘরের বাইরে এই উদার মুত্রত্যগের বিষয়টা আমাদের কতটা অভ্যেসগত সেটা বোঝা যায় আমাদের এক প্রতিবেশীকে দেখলে।  আমাদের এই প্রতিবেশী বাসা থেকে বের হয়ে সামনের ড্রেনে পেশাব করেন।  আশ্চর্য ব্যপার - পশুরা যেমন তাদের মুত্র দিয়ে নিজ এলাকা চিহ্নিত করে অনেকটা সেরকম। 
আরেকটি অভ্যেসের কথা না বলে পারছি না।  নাকের সাথে আমাদের কিছু আঙুলের যে সম্পর্ক, সেটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার যা জনসমক্ষে প্রদর্শন মারাত্মক দৃষ্টিকটু।  অথচ নাকের সাথে আঙ্গুলের এই সখ্যতা আমরা বিনা দ্বিধায় এবং যত্রতত্র প্রদর্শন করে প্রতিদিন দৃষ্টিদূষণ করছি।  পথে ঘাটে একান্ত মনোযোগের সাথে এই কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় আমাদের অনেককেই।
আমাদের বাসস্থান এবং তার চারপাশ এবং আমাদের শহর পরিচ্ছন্ন এবং দৃষ্টিনন্দন রাখার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে আমাদেরই যেখানে সরকার শুধুমাত্র সাহায্যের হাত বারিয়ে দেবে মাত্র।  পরিচ্ছন্নতার সাথে দারিদ্র্যের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করিনা।  আমার বাড়িঘর যতই ভাঙ্গাচুরা হোক না কেন, আমি এটাকে ঝকঝকে তকতকে রাখতে পারি একটু সচেতন হলেই, একটু চর্চা করলেই।  আমি থুয়াক থুয়াক করে যেখানে সেখানে থুতু ফেললাম না, আমি সর্বদা ঝাড়ু ব্যবহার করলাম, যত্রতত্র ময়লা না ফেলে এক জায়গায় জড়ো করে রাখলাম, চিপ্সের প্যাকেটটা ঢীল দিয়ে ফেলে দিলাম না গাড়ির জানালা দিয়ে - এরকম একটু আধটু অভ্যেস করে নিলেই কিন্তু অনেক বেশী বাসযোগ্য হবে আমাদের চারপাশ। 
মোটামুটিভাবে আমাদের সবারই বাসা থেকে আবর্জনা সরানোর লোক আছে।  আমরা রিকশা থেকে বা গাড়ির জানালা দিয়ে চিপ্সের প্যাকেট বা পানির বোতলটা রাস্তায় বা যেখানে ইচ্ছা সেখানে না ফেলে বাসায় এনে ডাস্টবিনে ফেললে কি হয়? 
জাহাজে  করে সেন্ট মারটিন্স যেতে যেতে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল - চারপাশে অদ্ভুত সুন্দর সমুদ্র আর গাংচিল!  অথচ চারপাশ থেকে এই সুন্দর সমুদ্রে বৃষ্টির মতো জাহাজ থেকে ঝরে পড়ছে পানি আর সোডার বোতল, চিপ্স আর বিস্কিটের প্যাকেট!  এত সৌন্দর্য নষ্ট করার ইচ্ছে হয় কিভাবে! এতটুকু খারাপও লাগে না!   যারা এই কাজগুলা করেছে তারা কিন্তু শিক্ষিত।