Friday, December 4, 2015

মুতের ঝিল

রঞ্জন, নুরুযযামান আর আমি ভার্সিটি থেকে ফিরছি রিকশায়।  হাতিরঝিলের কাছে এসেই দমবন্ধ হবার জোগাড় হল প্রস্রাবের গন্ধে!  রাগের মাথায় নুরুযযামান বলে উঠল - "এইডা হাতিরঝিল না, এইডা মুতেরঝিল!"  হাসতে হাসতে পেট ব্যথা!
ওদের ছেড়ে দিয়ে বাসায় আসতে আসতে ভাবলাম - জাতিগত ভাবেই আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে।  যত্রতত্র মুত্রত্যগ করার একটা বদ অভ্যাস আমাদের আছে।  আর ঘরের বাইরে এই উদার মুত্রত্যগের বিষয়টা আমাদের কতটা অভ্যেসগত সেটা বোঝা যায় আমাদের এক প্রতিবেশীকে দেখলে।  আমাদের এই প্রতিবেশী বাসা থেকে বের হয়ে সামনের ড্রেনে পেশাব করেন।  আশ্চর্য ব্যপার - পশুরা যেমন তাদের মুত্র দিয়ে নিজ এলাকা চিহ্নিত করে অনেকটা সেরকম। 
আরেকটি অভ্যেসের কথা না বলে পারছি না।  নাকের সাথে আমাদের কিছু আঙুলের যে সম্পর্ক, সেটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার যা জনসমক্ষে প্রদর্শন মারাত্মক দৃষ্টিকটু।  অথচ নাকের সাথে আঙ্গুলের এই সখ্যতা আমরা বিনা দ্বিধায় এবং যত্রতত্র প্রদর্শন করে প্রতিদিন দৃষ্টিদূষণ করছি।  পথে ঘাটে একান্ত মনোযোগের সাথে এই কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় আমাদের অনেককেই।
আমাদের বাসস্থান এবং তার চারপাশ এবং আমাদের শহর পরিচ্ছন্ন এবং দৃষ্টিনন্দন রাখার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে আমাদেরই যেখানে সরকার শুধুমাত্র সাহায্যের হাত বারিয়ে দেবে মাত্র।  পরিচ্ছন্নতার সাথে দারিদ্র্যের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করিনা।  আমার বাড়িঘর যতই ভাঙ্গাচুরা হোক না কেন, আমি এটাকে ঝকঝকে তকতকে রাখতে পারি একটু সচেতন হলেই, একটু চর্চা করলেই।  আমি থুয়াক থুয়াক করে যেখানে সেখানে থুতু ফেললাম না, আমি সর্বদা ঝাড়ু ব্যবহার করলাম, যত্রতত্র ময়লা না ফেলে এক জায়গায় জড়ো করে রাখলাম, চিপ্সের প্যাকেটটা ঢীল দিয়ে ফেলে দিলাম না গাড়ির জানালা দিয়ে - এরকম একটু আধটু অভ্যেস করে নিলেই কিন্তু অনেক বেশী বাসযোগ্য হবে আমাদের চারপাশ। 
মোটামুটিভাবে আমাদের সবারই বাসা থেকে আবর্জনা সরানোর লোক আছে।  আমরা রিকশা থেকে বা গাড়ির জানালা দিয়ে চিপ্সের প্যাকেট বা পানির বোতলটা রাস্তায় বা যেখানে ইচ্ছা সেখানে না ফেলে বাসায় এনে ডাস্টবিনে ফেললে কি হয়? 
জাহাজে  করে সেন্ট মারটিন্স যেতে যেতে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল - চারপাশে অদ্ভুত সুন্দর সমুদ্র আর গাংচিল!  অথচ চারপাশ থেকে এই সুন্দর সমুদ্রে বৃষ্টির মতো জাহাজ থেকে ঝরে পড়ছে পানি আর সোডার বোতল, চিপ্স আর বিস্কিটের প্যাকেট!  এত সৌন্দর্য নষ্ট করার ইচ্ছে হয় কিভাবে! এতটুকু খারাপও লাগে না!   যারা এই কাজগুলা করেছে তারা কিন্তু শিক্ষিত।  

Tuesday, September 22, 2015

ছোট্ট কবিতা

আমার কলিগ মিনহাযের অনেক প্রতীক্ষিত বিয়ে উপলক্ষে একটা কবিতা লিখেছিলাম :)  তার জীবন আল্লাহ সুখময় করুক, আনন্দের করুক এই দোয়া করি।
 -------
"আরও কয় সূর্যোদয় আগে চিরসঙ্গিনি যদি হতে
নিঃসঙ্গ যেত না এই উতলা বৈশাখ!
বিগত বসন্তে যদি বেঁধে নিতে মন যুগল বাঁধনে
অবলীলায় পেরুতাম সুকঠিন যত বাঁক!
দৃষ্টির ঘৃতকুমারি ছোঁয়া যদি দিতে দুই চাঁদ আগে
ক্ষরায় পুড়ত না এই অভাবি জমিন!
আরো দুই চাঁদ আগে যদি হত দেখা তোমার আমার!
আরো দুই চাঁদ আগে,
এ দু'হাতে রাখতে যদি সুচারু দু'হাত
এতদিন, নিঃসঙ্গ কি থাকতো এই দশটি আঙ্গুল!
দুরন্ত ঘড়ির কাঁটা থাকেনি তো থেমে!
তবু বাঁচোয়া - অনেক তৃষিত প্রতীক্ষা শেষে এসেছ এখন!
স্রষ্টার কি অবোধ্য কৌশল!
ঝেড়ে ফেলে সমস্ত ছিটেফোঁটা দ্বিধা
আমরণ অংশীদারিত্তে আজ বাঁধবো জীবন!
তুমি আর আমি, আমি আর তুমি!"


Saturday, August 15, 2015

চলে যেতে ইচ্ছে করে

মন ভীষণ খারাপ - তাই মনমরা একটা কবিতা -

"ভুলে-ভালে বেমানান সব রঙে এঁকেছিলেম ছবি
ভুলে-ভালে অনেক বেসেছিলেম ভালো
যে সমীকরণ না মেলার
তাকে মেলাবার প্রানান্ত প্রচেষ্টায়
দলা পাকিয়ে ডাস্টবিনে ফেলেছি জীবনের অনেক দিন ও রাত।
দু'পায়ে ক্লান্তির ভারি নোঙর এখন।
অনেক হয়েছে বেলা
অনেক, অনেক ছুটোছুটি অকারণ!
এখন আমি পার্থিবতার বেড়াজাল টপকে
এক ছুটে চলে যাব অনন্তেরর দিকে
পিছু ফিরে তাকাবোনা একবারও
চোখ পড়ে যেতে পারে প্রিয়দের চোখে!
বাহনের জানালা দিয়ে অনেক দেখেছি
প্রিয় অবয়বের ক্ষুদ্র হতে হতে
দিগন্তের সাথে মিলিয়ে যাওয়া,
ঝাপসা পর্দার আড়ালে!
পিছু ফিরে তাই দেখব না এবার!
আমার মা বলেন -
"তোর বাবা যেন আমার কোলে মাথা রেখে
হেঁটে চলে গেল ফুলের রাস্তা দিয়ে!
মৃত্যু এত সহজ হয়!"
আমি আমার বাবার এই মৃত্যু
নিজের জন্য ঘোর কামনায়,
দিন রাত...
সুদুর অতীতের স্মৃতি আমাকে বলে -
"তুই তো প্রায় গিয়েছিলি সেদিন,
জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর আরেকটি শুমারি হয়ে!"
কেন এই বর্ধিত জীবন?
ফিরে যাওয়া সারি সারি মানুষের নির্যাসে
বেড়ে উঠা সবুজ অরন্য দেখে দেখে ভাবি -
আমিও একদিন পুষ্টি জোগাব তরুণ বৃক্ষের!
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের যুগল পালা
মাঝে মাঝে বড় বেশী বোঝা মনে হয়! "

Monday, May 11, 2015

ঢাকাইয়ানদের কথা

ফজরের সালাত আদায় করিবার জন্য উঠিয়া আমার চারিপাশে মশাদের অজস্র মৃতদেহ দেখিয়া প্রমান পাইলাম যে আমি স্বপ্ন দেখিতেছিলাম না - আমি বাস্তবিকই সমস্ত রাত্রি আধো ঘুম, আধো জাগরণে মশককূলের সাথে সমরে লিপ্ত ছিলাম!  মেজাজ খারাপ!  সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে যদি রাতে একটু ঘুমানো না যায় তাহলে বাঁচি কি করে!  গরমে মশারি টাঙ্গালে ফ্যানের বাতাস পাওয়া যায় না।  আর মশারি না দিলে মনে হয় আমার বাসার মশাগুলো সারা পাড়ার মশাদের দাওয়াত দেয় ডিনারের! 

ছোটবেলায় কলকাতার একটা বহুল প্রচলিত কথা শুনতাম প্রায়ই - "রেতে মশা, দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি।"  আমি কলকাতার খবর জানিনা - তবে ঢাকার খবর ভালভাবেই জানি!  আমাদের এখানে মাছির উতপাত এখন কম, বেচারাদের বংশবৃদ্ধির হার কমে গেছে - সবই ফরমালিনের ফযিলত!  কিন্তু মশারা এখানে বহাল তবিয়তে আছে।  তাদের ভাগ্য ভালো তারা তাদের শিশুদের বৃদ্ধির জন্য মানুষের ফেলে দেয়া খাদ্যদ্রব্যেকে ব্যবহার করে না - নাহলে এতদিনে তাদেরও কেল্লা ফতে হয়ে যেত। 

যাই হোক - শুধু মশা কি ঢাকাইয়ানদের (মানে ঢাকাবাসীদের) একমাত্র ভোগান্তির কারন?  মোটেই না!  গর্ব করে বলতে পারি রাস্তার ট্র্যাফিক জ্যাম আমার পনেরো মিনিটের রাস্তাকে দেড় ঘণ্টার রাস্তায় পরিণত করে দেয় খুব সহজেই!  কোন ব্যপারই না!  আর যদি গরমকাল হয় তবে তো কথাই নেই - গাদাগাদি ভিড়ে বাসে যখন আমরা থাকি, তখন সরসর করে সব ঘাম ঊর্ধ্বাঙ্গ বেয়ে নেমে গিয়ে জমা হয় আন্ডারওয়েরে যা খব দ্রুত চটকে লেগে যায় নিতম্বের সাথে!  কি আনন্দায়ক অনুভুতি!

আর সবুজের বংশ নির্বংশ করে ফ্ল্যাট নির্মাণের তোরে ঢাকা শহর থেকে নিরমল বায়ু হারিয়ে গেছে অনেক আগে - মাঝে মাঝে দাঁত কিচমিচ করে বালিতে - মনে হয় দাঁত মেজে ফেলা যাবে, টুথপেস্টের খরচটাও বেঁচে যাবে!
হে আল্লাহ - এতসব নাগরিক সুযোগসুবিধা থেকে কবে মুক্তি পাব!  

Sunday, May 3, 2015

একান্নবর্তি পরিবার

সাত সকালে ইস্তারিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না - মেজাজ খারাপ!  একটু পরেই বের হতে হবে অফিসের জন্য।  বোঝা গেল ইস্তারিটা ভাবি রাতে নিয়ে গিয়েছিল, ফেরত দেয়নি!  এখন ভাই-ভাবি দুজনই ঘুমাচ্ছে - রুম বন্ধ।  কি যন্ত্রণা!  আরেকটা ইস্তারি কিনে ফেললেই হয় আসলে - তাহলে আর এধরণের ঘটনা ঘটবে না।  কিন্তু আমি এটা করব না!  কেন করব না তার ভালো অনেক কারন আছে।  আমরা ৩ ভাই একসাথে থাকি মাকে সাথে নিয়ে পাশাপাশি দুটা ফ্ল্যাট এ - একান্নবর্তি পরিবার।  বোনটাকেও যদি নিয়ে আসতে পারতাম, তবে আরও ভালো হত!  যাই হউক - আমাদের এই একসাথে থাকাতেই আনন্দ - সেজন্যই আমি আরেকটা ইস্তারি কিনব না - যদি কিনি তবে এই ভাগাভাগি করার আনন্দটা আর পাওয়া যাবে না!  আজ যেমন ভাবির উপর আমার রাগ হয়েছে, তেমন আমিও আমার ভাইদের/ভাইদের বউদের/মায়ের/বউয়ের রাগের কারন হই প্রায়ই।  কাজেই এটাকে ধরার কোন প্রয়োজন আমার নেই।

আমরা একসাথে থাকি বলেই মাঝে মাঝেই ঠুকাঠুকি হয়ে যায় - এটা স্বাভাবিক!  মানুষে মানুষে ঠুকাঠুকি হবে না তো কি মানুষে আরে গরুতে ঠুকাঠুকি হবে??  কিন্তু আমরা সেইসব সাময়িক মন কষাকষিগুলোকে পাত্তা দেই না।  দুদিন ঝগড়া করে আবার ঠিকই মিলে যাই!  আমি বা আমার ছোট ভাই যদি বাসায় না থাকি আর ভালো কিছু যদি রান্না হয়ে থাকে, তবে ভাবি সে রান্নার কিছুটা চুরি করে তুলে রাখে আমাদের জন্য, মাকে জানতেও দেয় না।  আমি লিনার (আমার ছোট ভাইয়ের বউ) রান্না করা মাছ খুব পছন্দ
করি।  সেটা জানে বলে লিনাই মাছ রাঁধে বাসায়, আমার কথা চিন্তা করে।  আমি একবার অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম বেশ -  আমি তখন আমার ভাইদের অস্থিরতা দেখেছি।  এতসব ভালবাসাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আমি যখন বাসায় ফিরি - তখন দেখি আমার আর আমার ভাইদের ছেলে-মেয়েগুলো একসাথে খেলছে, আড্ডা মারছে।  প্রায় প্রতিদিনই দেখি আমার ছোট ছেলেটা তার রোদরশি আপুকে জালাচ্ছে, আফ্রিদা তার বড় কোন এক ভাইয়ের ঘাড়ে চড়ে বসে আছে।  অনেক সময় গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় চিল্লাচিল্লি শুনে - দেখা যায় আমার ভাতিজাটা চুরি করে রাতে চলে এসেছে এপাশে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখার জন্য তার চাচি আর ভাইদের সাথে - সাথে চলছে চিপ্স আর সোডার পার্টি!  আমার বউটা ফুটবল পাগল!

আমার কাছে এই দৃশ্যগুলো অনেক মুল্যবান এবং আমার ক্ষুদ্র তুচ্ছ ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা - এসবের কাছে আমি অমুল্য এই সম্পদগুলোকে বিসর্জন দিতে পারব না!  আমাদের সন্তানেরা আমাদের বৃহত্তর  স্বার্থ - তাদের সঠিকভাবে ভালবাসায় বেড়ে উঠা জরুরী, তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করতে শেখাটা একান্ত দরকার।  আমি তাদের ভালর জন্য আমার ব্যক্তিগত ছোটখাটো আবেগগুলোকে ভুলে যাব নির্দ্বিধায়!
জাতিয় পর্যায়েও এই কথা সত্য।  আমাদের মতের অমিল হবে, তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকবে - কিন্তু ন্যায় এবং নীতির জন্য, মানুষের ভালর জন্য ঐক্যবদ্ধতাই হউয়া উচিৎ আমাদের মৌলিক লক্ষ্য!  

Tuesday, March 31, 2015

বাংলাদেশের জনগণ

বাপ-দাদারা জন্মেই দেখেছে অস্তিত্ত ব্রিটিশদের দখলে, পাকিস্তানের দখলে!  আমি জন্মেই দেখেছি আমি অসৎ রাজনীতির এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের দাস মাত্র, জন্মেই দেখেছি ভিন দেশের চোখ রাঙ্গানি!  আমি স্বাধিন ছিলাম কবে?  সময় এসেছে আমাদের সবকিছু পুনর্বিবেচনা করার।  এভাবেই দিনের পর দিন চলে যাবে?  আমাদের দাসত্ব কি উত্তারাধিকারসুত্রে বর্তাবে আমাদের সন্তানদের উপর?
---------------
"জেনে গেছি -
বেড়ীবদ্ধ দু'পায়ে আমি আজন্ম পরাধীন!
পদপিষ্ট হতে হতে বুঝে গেছি -
কারো রাজপ্রাসাদের আমি খোদিত সোপান!
গলদেশে ধারাল ছুরির তীক্ষ্ণ আঘাতে
আপন রক্তের ফিনকি দেখে দেখে
বুঝে গেছি, কারো আমি বলির পাঁঠা!
হেসে হেসে বাজি রেখে আমার জীবন
নিঠুর জুয়াড়ি দিয়েছে বুঝিয়ে -
অশালীন রাজনীতির আমিই তো জ্বালানী!
আমাকে প্রজ্বলনের উৎসব
উপভোগ করে অনেকেই - আমি জানি!
বিদেশী বনিকের কাছে আমাকে ফেরি করে যারা
দেশজ চেতনায় সবচেয়ে বেশী উৎফুল্ল দেখেছি তারা!
আমি কে?
আমি বাঙালি! আমি বাংলাদেশী! আমি পাহাড়ি!
যে নামেই ডাক না আমায় - আমি বাংলাদেশের জনগন!
আমি নিষ্ক্রিয় সয়ে যাই সমস্ত শোষণ!
বাকহীন,  দৃষ্টিহীন, চেতনাবিহিন!
আমি কি উঠবো না জেগে?
শুদ্ধ চেতনা আর কর্মের যৌথ উদ্যোগ
সাথে মিশে চঞ্চল এ চিত্তের অদম্য আবেগ
আমাকে জাগাবেই একদিন!
একাত্তুর কি ভুলেছে সবাই?
ভুলে গেছে নুর হোসেনের রক্তাক্ত নব্বই?
লোহিতে কেবল লাগল বলে ঝড়ো বাতাস!
শুধু সময়ের অপেক্ষায়!
সাবধান হয়ে যাক যতসব অসৎ বেনিয়া!
পটের যে ভাবী পরিবর্তন
নিশ্চিত আভাস পেয়েছি তার দখিণা বাতাসে!
শিকারি তুমি হয়ে যাবে শিকার এখন!
আমি বাংলাদেশের জনগন!
আমিই  বাংলাদেশের জনগন!"

Sunday, March 15, 2015

শুভ্রতা চাই!

সালাহউদ্দিন সাহেব যেন সুস্থ অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরে আসেন সেই দোয়া করি -  আরেকজন ইলিয়াস আলি যেন তিনি না হন!  খুব বিরক্ত হয়ে গেছি - আর গুম-খুন দেখতে চাই না, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে মুক্তি চাই, আন্দোলনের নামে পোড়ানো লাশের গন্ধে বাতাস ভারী যেন আর না হয়, অন্ধ বাঙ্গালী জাতিয়বাদের তোড়ে আমার আর কোন পাহাড়ি বোনের ধর্ষণ উপেক্ষিত হোক চাই না, নাস্তিকতা বা ধার্মিকতার নেশায় কেও কাওকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দিক সেটাও চাই না।  সহমর্মিতা চাই, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ চাই, চাই নিয়মতান্ত্রিকতা আর ন্যায়বিচার।  আল্লাহ আমাদের শান্তি দিক, সহায় হোক!  
-
"শুভ্রতা নেই, স্বচ্ছতা নেই
চারদিকে শুধু চোখ জ্বালা করা
ধোঁয়াটে আধার!
সরলতা নেই, সহজতা নেই
চারপাশে শুধু
মন জ্বালা করা ধ্বংসাবশেষ,
সহজ স্মৃতির!
বদলে গিয়েছে সব -
চারিধার, আমার উঠোন!
অমাবস্যার রাত যেন নেমেছে চেতনায়!
টলটলে নীলাভ জলে
হয়ে যাব নিঃসঙ্গ ডিঙ্গি!
স্বজাতি থেকে সবথেকে দূরে
বহুদূরে কোন এক অচেনা সাগরে!
কিছু নেই, কিছু নেই, ভালো কিছু নেই!
সব ভাল যেন গিয়েছে মিলিয়ে
কোন এক অচিন গহ্বরে!
প্রতিকার চাই, সরলতা চাই!
প্রতিটি রাতের শেষে, বার বার
আমি চাই উদার সমুদ্রের ভোর!
ধবল দোলনচাঁপার যে পবিত্রতা
আজ তাকে খুব, খুব প্রয়োজন!"

Saturday, February 28, 2015

অভিশাপ দিতাম!

আমার নবী(সাঃ) যদি অভিশাপ দেয়াটা অপছন্দ না করতেন তাহলে আমি ভয়াবহ অভিশাপ দিতাম তাদের যারা তাদের ঘৃণা এবং সংকীর্ণতার তুষ্টি সাধন করার জন্য আমার কোন কোন নিরীহ, নামাজি ছাত্রকে অন্যায়ভাবে কোন গোষ্ঠীর ছিল ছাপ্পর মেরে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে বা তাদের রাস্তাঘাটে বিরক্ত করে!  এমন অভিশাপ দিতাম যেন তাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত দুর্বিষহ হয়!  আমার এই অভিশাপ আল্লাহ গ্রহন করতেন কিনা জানিনা, কিন্তু আমি অভিশাপ দিতাম!
আর কেও কেও খুব খুশি হবে আমি মরে গেলে বোঝা গেল - আমি কেন বাসের তলায় পরি নাই সেটা নিয়ে আক্ষেপ দেখা গেছে!  আমি কখনো মায়া ছাড়া কিছু দেইনি - প্রতিদান ভালই!  ঘৃণা কতদুর যেতে পারে!
আর কেও কেও আছে যারা নিজ গোত্রীয় কেও খুন হলে খুব কষ্ট পান, কিন্তু অন্য গোত্রের কেও খুন হলে তাদের কিছু যায় আসেনা - এরাই আবার মানবতার স্লোগান তুলেন!  
আর আমাদের মুসলমানদের মনে রাখতে হবে কে কোথায় কি বলছে ইসলাম নিয়ে সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি নিজে ইসলাম পালন করছি কিনা সেটার দিকে নজর রাখা।  বিচার-বহির্ভূত কোন হত্যাকাণ্ড সমর্থন করার প্রশ্নই আসে না!
আমার সংস্কৃতি নির্ধারিত হয় আমার বিশ্বাস দ্বারা ।  আর যেহেতু ইসলামে আমি বিশ্বাস করি, কাজেই সেটই আমার সংস্কৃতির বড় একটি অংশ।  কারো সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা, জাতীয়তা, জাতীয় সঙ্গীত, দেশ - এই সংবেদনশীল জিনিশগুলো নিয়ে নোংরা কথা কেও বললে সেটা তাদের গায়ে লাগতেই পারে, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারে।  একইভাবে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলে, নবি (সাঃ) কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে খুব্ধ হবার অধিকার আমাদের মুসলমানদের অবশ্যই আছে যদিও কেও কেও মনে করেন সে অধিকারও আমাদের নেই!  তবে আমাদের মুসলমানদের খেয়াল রাখতে হবে যে ক্ষোভ প্রকাশের ভাষাটা যেন সন্ত্রাস না হয় এবং শালীনতাবিবর্জিত না হয়!  এখানে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা একান্ত জরুরী।
আমাদের ক্ষমাশিলতা শিখতে হবে - এটাই কোরআন এবং সুন্নার শিক্ষা!  মক্কা বিজয়ের পর আমাদের নবি(সাঃ) তার সকল শত্রুদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন যদিও এই শত্রুরাই তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল, তাঁকে হত্যার বিভিন্ন প্রয়াশ চালিয়েছিল!  তিনি সেবা করেছেন এমন মানুষের যে তাঁর পথে নিয়ত কাঁটা বিছিয়ে রাখত। আমাদের এগুলো মনে রাখতে হবে।
কিছু কিছু মানুষ আমাদের ক্ষেপাবার প্রানান্ত চেষ্টা করে যাবে, তারা প্রতিনিয়ত নোংরাভাবে আমাদের ধর্মকে, আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) কে আঘাত করবে।  কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরব, আমাদের রাগ সম্বরন করব এবং কখনো সন্ত্রাসকে বেছে নেবনা!   আমরা তাদের জন্য দোয়া করব যাতে আল্লাহ তাদের হেদায়েত দেন।
এসব লোকজন তাদের 'পরিশুদ্ধ বিবেক' আর 'উন্নততর বুদ্ধিবৃত্তির' নেশায় বুঁদ হয়ে সিংহভাগ সময় ব্যয় করবে আমাদের দোষ ধরতে, খোঁচাতে।  কিন্তু আমাদের এসবের দিকে নজর দেবার সময় নেই - আমরা আমাদের সিংহভাগ সময় ব্যয় করব জ্ঞান অর্জনে, সমাজের দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে, আমাদের  পাড়া-প্রতিবেশিদের সহায়তা দিতে, অবিচার দূর করতে।
আমরা সর্বদা ক্ষমাশিলতাকে প্রাধান্য দেব কারন আল্লাহ সেটাকেই উত্তম বলেছেন।  আমরা সর্বদা শান্তিকেই প্রাধান্য দেব - কারন সেটাই কোরআন এবং সুন্নার শিক্ষা!   আর আল্লাহ আমাদের পরিষ্কার আদেশ দিয়েছেন যারা অমুসলিম তাদের তাচ্ছিল্ল্য না করতে।  কাজেই সে পথ মাড়ানোর দুঃসাহস আমাদের দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই।  
আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হন!

Tuesday, February 17, 2015

শৃঙ্খল

মাঝে মাঝে মনে হয় সমস্ত নিয়ম যদি ভেঙ্গে যেত, তবে বেশ হতো!  আজীবন বিভিন্ন নিয়মের বেড়াজালে আমদের থাকতে হয়, যা আমদের সময় সময় অস্থির করে তুলে!  মাঝে মাঝে এমন সব আবেগ আমাদের তাড়া করে ফেরে যার উৎস আমাদের অজানা! হঠাৎ হঠাৎ তাই মনে হয় সব ভেঙ্গে ফেলি, সব বেড়াজাল উপড়ে ফেলি - খুব ইচ্ছে হয় সমস্ত আবেগ কাঁচের মত স্বচ্ছ হয়ে যাক!  কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয়, এতেই কি মুক্তি মিলবে? শান্ত হবে জটিল এই মন?
------------
"শুধু একদিন
ভেঙ্গে যদি যেত পৃথিবীর সমস্ত নিয়ম!
শুধু একটি মুহুরতের জন্য,
ঝুরঝুরে বালির মতো যদি
খসে যেত সমস্ত শৃঙ্খল!
শুধু একদিন,
শুধু এক মুহুরতের জন্য,
ছিড়ে যদি যেত আমার সমস্ত বাঁধন,
বানের জলে যদি যেত মুছে
সমস্ত পরিসীমা!
শুধু একদিন,
শুধু এক মুহুরতের জন্য,
টলটলে জলের মতো যদি স্বচ্ছ হয়ে যেত
আমার সমস্ত আবেগ!
মুক্ত কি হতাম আমি?
হে স্রষ্টা -
তোমার ভয়াবহ সৃষ্টি এই মানব মন,
গুঢ় আবেগের এই সন্মিলন
না বোঝার ক্লান্তিতে নুব্জ্য করেছে আমায়!
বোঝাও তুমি - কেন সন্ধ্যার আগমন
বিষণ্ণ করে তুলে আমাকে এমন!
সুচতুর শিকারির মতো কেন
তাড়া করে ফেরে সব ফেলে আসা ক্ষণ!
কারণবিহীন সব ভালো না লাগা
আর ভালো লাগেনা!" 

Sunday, February 1, 2015

তুই?

বিরোধী দলের সাম্প্রতিক জ্বালাও পোড়াও আর সরকারের পুলিশি নির্যাতন, অগনতান্ত্রিক আচরনে বিরক্ত হয়ে গেলাম!  এদের আমি মানি না, মানবো না!  আমার এই কবিতা তাদের প্রতি আমার এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ---
"তুই থামাবি আমার প্রাণের স্পন্দন?
জানিস না,
স্রষ্টার হাতে আমার এই যে জীবন?
গলা টিপে থামাবি তুই আমার কোলাহল?
তুই পোড়াবি আমার আদরের ত্বক?
তুই?
ভীতির বাঁধে থামাবি আমার
চেতনার স্রোত?
তোর পেট্রোল বোমার
আমি করি থোরাই কেয়ার!
জেনে রাখ!
জেনে রাখ!
তোর পেটোয়া বাহিনীর চোখে রেখে চোখ
আমি দৃঢ় পায়ে হেঁটে যাব গন্তব্যে আমার!
ভেবেছিস তোর ভয়ে
এক ঠায় বসে রব ইজি চেয়ারে!
কোনদিন না,  কক্ষনো না!
আমি কাজে যাব,
যাব কবিতা উৎসবে,
আমি যাব মসজিদে
আমার ভালবাসাদের নিয়ে
খুশিমতো ঘুরে ফিরে বেড়াবো আমি
আমার এ ভুমিতে!
নিকুচি করি তোর সন্ত্রাসের!
তোর নিয়ন্ত্রণে আমি দেব না জীবন!
জেনে রাখ!
জেনে রাখ!
আর তৈরি হয়ে থাক!
তোর দোরগোড়ায়,
মুষ্টিবদ্ধ হাতে একদিন আমাকেই পাবি!"

Tuesday, January 27, 2015

সিএসই/আইটি ( ইউআইটিএস ) বিভাগের প্রথম ফেয়ারওয়েল এর কবিতা

"চলে যাবে জানি,
টেনেছ অনেক ঘানি!
আমায় দিয়ে করিয়েছ অনেক দাঁত কিরমিরানি!
"কাওকে" সাথে নিয়ে, পড়া ফাঁকি দিয়ে
অনেক, অনেক ঘুরেছ তোমরা হাতিরঝিলে যেয়ে।
কিন্তু, আমার কাছে রেখেছ অনেক হোমওয়ার্ক বাকি!
যতবারই দেখেছি তোমাদের পরীক্ষার খাতা
নাপা এক্সট্রাও থামাতে পারেনি আমার মাথার ব্যাথা!
“যত্তসব ফাঁকিবাজের দল” -
বারে বারে চেঁচিয়ে উঠেছে আমার অন্তঃস্থল!
থাক - এখন যাবেই যখন চলে
কি আর হবে এসব কথা বলে!
তবুও এটুক শুনে রাখ -
যদি না কর উজ্জ্বল আমার এই মুখ
বুঝতে পারবে পাখির মত উড়তে পাড়ার সুখ!
ভার্সিটির ওই দশ তলার জানালা আছে খোলা
ভুলিয়ে ভালিয়ে কাছে নিয়ে দেব একটা ঠেলা!
থাক - অনেক হল প্যাঁচাল
আবার বলি সেসব কথা, যেসব কথা বলে
ক্লান্ত এখনো হইনি আমি মুখে ফ্যানা তুলে।
"শুধু আমার জন্যই আমি নই"- থাকে যেন মনে।
"সবাই আমার আপন জন" - এই ভাবনা যত্ন করে রেখ তোমাদের প্রাণে!"
---------আমার ছাত্র/ছাত্রীরা - তোমাদের জন্য এই কবিতা। আমি কেন তোমাদের এত ভালবাসি, তার কারণ খুঁজতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছি বার বার।  থাক, কিছু কিছু কারণ না জানাই ভালো!  তোমাদের দেখলে অনেক সময় রাগের ভান করলেও আমার ভেতর আসলে অনেক আনন্দ হয় - বাধ্য হয়ে হেসে ফেলি!  বার বার মনে হয় - "মুক্তি নাই রে পাগল!"
যাই হউক - তোমরা মনে রেখ, তোমরা শিক্ষিত হয়েছ।  কিন্তু শিক্ষিত হবার মানে শুধুমাত্র জ্ঞান, বিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন নয়, শিক্ষিত হবার সবচেয়ে বড় লক্ষণ হচ্ছে অন্যের জন্য ভাবতে শেখা।  অর্থ উপার্জন তো করতেই হবে, কিন্তু তা করতে গিয়ে অন্যদের ভুলে  গেলে হবেনা!  অনেকেরই তোমাদেরকে অনেক প্রয়োজন।  তোমরা সেটা হয়ত জাননা, আর যাদের প্রয়োজন তোমাদেরকে, তারাও জানেনা যে তোমাদেরকে তাদের প্রয়োজন!  যে ছেলেটি শীতের কনকনে রাতে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ায়, যে মেয়েটি আশ্রয়হীন, যে মা খাবারের স্বল্পতার কারনে না খেয়ে থেকে সন্তানকে খাওয়ায়, যে বাবা পানি করে রক্তকে প্রতিদিন, যে মানুষ গুম হয়ে যাওয়া ভালবাসার মানুষের অপেক্ষায় জেগে থাকে প্রতি রাত, যে মানুষ নির্যাতিত কোন না কোন ভাবে - এই সব মানুষদেরই তোমাদেরকে  খুব প্রয়োজন। 
প্রতিদিন তোমার চেষ্টা করবে কোন না কোন অন্যায়, সে যত ছোট হউক না কেন, প্রতিহত করতে। চেষ্টা করবে কোন না কোন ভাবে পরিচিত/অপরিচিত কাওকে সাহায্য করতে। হিসাব করে দেখ - তোমরা কতজন আছ।  এভাবে কাজ করলে প্রতিদিন কতগুলো ভালো কাজ হবে!  এভাবেই তো বিপরীতমুখী স্রোত দাড় করাতে হবে। হতাশার কিছু নেই, দূরে থাকবে সেসব লোক থেকে, যারা ধরেই নিয়েছে কোন কিছু করে কোন লাভ নেই - এরা ইতিহাস জানেনা।
সে মহান স্রষ্টা, যার কোন শরিক নেই, নেই সমকক্ষ কেও, যাকে বিভিন্ন চমৎকার সব নামে ডাকে বিভিন্ন মানুষ, তিনি তোমাদের ভালো রাখুন, ইহকাল, পরকাল দুই পৃথিবীতে - এই কামনা করে শেষ করলাম!  আসসালামুয়ালাইকুম!