Wednesday, November 27, 2013

দুই দলীয় রাজনীতি

আমি তেমন কিছু জানিনা, শুধু আমার কিছু চিন্তা ভাবনা তুলে ধরলাম এখানে বর্তমান দুই দলীয় রাজনীতির উপর -

দুই দলিয় রাজনীতি যেভাবে কাজ করে -

প্রথম বেক্তিঃ আঃলিঃ না এলে দেশে জঙ্গিবাদ বেরে যাবে, দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে!
দ্বিতীয় বেক্তিঃ  কিন্তু বিএনপি না এলে এ দেশে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে।  আর আঃলিঃ তো সন্ত্রাস করে।
প্রথম বেক্তিঃ জানি আঃলিঃ অনেক বাজে কাজ করে, কিন্তু বিএনপি কে চাই না, তারা দেশে ইমাম শাফির নিয়ম চালু করবে, সাম্প্রদায়িকতা বেরে যাবে - এটা মানা যায় না! আর তাদের দুর্নীতির কথা সবাই
জানে।
দ্বিতীয় বেক্তিঃ বিএনপির দুর্নীতির কথা ঠিক, তারাও খারাপ - কিন্তু আঃলিঃ সরকারের সময় অনেক ইসলাম বিরোধী কাজ হয়, আধুনিকতার নামে অনেক নোংরামি হয়! তাছাড়া আঃলিঃ কম দুর্নীতি করে নাই!  আর এমন এক সময় আসবে যখন দেখা যাবে তারা হিজাব নিষিদ্ধ করে দিয়েছে!

দুই দলিয় রাজনীতি আমাদের কে দুটো দলের ভেতর একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করছে আমাদের মনের ভয়গুলোকে ব্যাবহার করে।  তৃতীয় কোন প্লাটফর্ম তারা তৈরি হতে দিচ্ছে না!  আমরা পরোক্ষভাবে
এদের অন্যায়গুলোকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি বিভিন্ন অজুহাতে।  আমাদের অনেক গুণীজনও এ ধরনের চিন্তা ভাবনার কারনে দলিয় বৃত্তের বাইরা আসতে পারছেন না।

"আমাদের আর কি করার আছে?  একজন না আসলে আরেকজন তো আসবেই!  তাই দুজনের ভেতর আমার মতের সাথে কিছুটা মিল আছে এমন একজন বেছে নেয়া ছাড়া উপায় নেই!  " - এধরণের চিন্তা
ভাবনা অধিকাংশ মানুষের।  আবার কিছু কিছু মানুষ ভাবেন - "তৃতীয় আর কে আছে!"  আমরা যত এ ধরনের ভাবনার ভেতর আবদ্ধ থাকব, আমাদের দুদলের জন্য তত মঙ্গল!

তাহলে আমাদের কি করা উচিৎ?  বাংলাদেশে হয়ত অনেক সুপ্ত নেতৃত্ব আছেন যারা জেগে উঠতে পারছেন না আমাদের এই চিন্তাধারার কারনে।  তারা ভাবছেন, "চেষ্টা করে আর কি হবে, ভোটের সময় তো মানুষ ভোট ঠিকই দেবে এই দুদলের একদল কে।"
কথা ঠিক!  তাহলে আমাদের, জনগনের, যা দায়িত্ব তা হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া।  এই পরিবেশ তৈরি করতে গেলে আমাদের জনগনের কাজ হবে বিবাদমান দুদলের প্রতি চরম
অনাস্থা প্রকাশ করা।  এই অনাস্থা প্রকাশিত হয়ে যাবে ভয়ে "না" ভোট উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।  আমাদের এখন উচিৎ তাহলে নির্বাচন থেকে বিরত থাকা।  যখন অসংখ্য মানুষ নির্বাচন থেকে বিরত থাকবে, তখন
কারো সামর্থ্য হবে না এই সত্যকে লুকিয়ে রাখার।
তখন আমাদের অনেক সুপ্ত নেতৃত্ব ভরসা পাবেন, ভাববেন যে এবার একটা কিছু করা যায় - যে শুন্যস্থান তৈরি হয়েছে তা পূরণ করার চেষ্টা এবার করা যেতে পারে।  মানুষ তাদের সাথে পথ চলবে এই আশা তখন তাদের ভেতর তৈরি হবে।  এবং এই কাজে আমাদের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বিরাট ভুমিকা পালন করতে পারেন দলীয় রাজনীতির বাইরে এসে আর মানুষের ভালকে তাদের মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেন।

মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবার এই নতুন নেতৃত্ব বের করে আনার চেষ্টা আমাদের করতেই হবে।  আর নাহলে এই ধ্বংসাত্মক এই "দুই দলীয় বৃত্ত" থেকে আমরা  বের হতে পারব না,  সামাজিক ন্যায় বিচার
আমরা প্রথিস্থিত করতে পারব না,  বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মাধ্যমে আইনের চোখে সবাইকে সমান করতে পারব না।  অর্থনৈতিক সাম্য প্রথিস্থা করতে পারব না।
আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য এমন দেশ রেখে যাবার চেষ্টা আমাদের করা উচিৎ যে দেশ থেকে পালিয়ে যাবার চিন্তা তাদের মাথায়ই আসবে না!  এটা আমাদের দায়িত্ব! 

Saturday, June 29, 2013

নিঝুম দুপুর

গা ছমছম করা কিছু নির্জন দুপুর আছে আমার স্মৃতিতে।  অনেক আগে আমার শৈশবে/কৈশোরে, খোলা জায়গা ছিল অনেক, প্রচুর গাছগাছালিও ছিল।  নিরিবিলি সে সময় সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমাত কিছুক্ষণ।  সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত, আমি একা মেতে উঠতাম খেলায়।

এমনি এক দুপুরে, খুব সম্ভবত  সিঁড়িতে বসে, গভীর মনোযোগ দিয়ে ফাঁদ পেতে চড়ুই ধরতে চেষ্টা করছিলাম, ভেঁজে খাব বলে।  চারদিকে সব সুনসান।  হঠাৎ ঘাড়ের লোমগুলো সব দাঁড়িয়ে গেল, মেরুদণ্ড বেয়ে মনে হল নেমে যাচ্ছে একটা ঠাণ্ডা সরীসৃপ! কেও একজন আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে।  ভয়ে জমে গেছি - ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর দুঃসাহস হচ্ছে না আমার!  কতটা সময় চলে গিয়েছিল জানিনা!  শুধু জানি, একটু শক্তি ফিরে পেতেই ঝট করে ঘাড় ঘুরিয়েছিলাম, কিন্তু পেছনে কেও নেই!  তবু  কেন জানি মনে হচ্ছিল, কেও একজন ওত পেতে আছে আমাকে মারবে বলে।  একছুটে দৌড়ে ঘরের ভেতর - হৃৎপিণ্ড কত সময় নিয়েছিল স্বাভাবিক হতে, তা মনে নেই!

নির্জন এমন দুপুরের কথা এখন খুব মনে হয় এবং খুব আফসোস হয়!  অদ্ভুত শুনাবে, কিন্তু আফসোসটা আমার সন্তানদের জন্য! আমি কায়মনোবাক্যে তাদের জীবনে এমন ভয়ঙ্কর দুপুর প্রার্থনা করি!  কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা তাদের হবে বলে মনে হয় না!  তাদের জীবনে নিঝুম দুপুর বলে কিছু নেই!  মানুষের ভিড়ে বিলিন হয়ে গেছে গাছপালা - চড়ুইরা সব মরে ভুত হয়ে গেছে অনেক আগে!   খোলা জায়গা আবার কি জিনিস ঢাকা শহরে!
আমার সন্তানরা ফাঁদ পেতে চড়ুই ধরার খেলা খেলতে পারবে না কখনো - কখনো সফল হইনি চড়ুই ধরায়, কিন্তু ধরার চেষ্টার যে আনন্দ তা বলে বুঝান যাবেনা!  আমার সন্তানরা কোনদিন এই আনন্দের সাথে পরিচিত হবে না!  তারা ছাদকে মনে করে খলার মাঠ!  আমাদের মত বৃষ্টিতে, কাদা পানিতে ফুটবল খেলার মজা তারা কখনো পাবেনা।
আমাদের ছোটবেলায় পাড়ার সব বারিঘরে ছিল আমাদের অবাধ যাতায়াত - খেলতে খেলতে যখন তৃষ্ণা পেত, সবচে কাছের বাড়ীটাতে ঢুকে বলতাম, "খালাম্মা, পানি দেন না একটু!"  আমার সন্তানরা দৌড় দিয়ে কখনো চলে যেতে পারবেনা অন্যের বাড়িতে - এখন অনেক ধরনের বাঁধা ব্বিপত্তি, অনেক ধরনের সব দেয়াল!
অনেক পরিবর্তিত হয়েছে আমাদের বেশবাস - কিন্তু এই পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছিনা!  শুধুই কষ্ট হচ্ছে!

Monday, April 29, 2013

সোহেল রানা - আমাদের রাজনীতি এবং আমাদের উদাসীনতা।


টেলিভিশন দেখছি - ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা কে গ্রেফতার করা হয়েছে!  পুলিশের মাঝখানে বিধ্বস্ত রানা দাড়িয়ে থাকতে পারছে না - মাঝে মাঝেই গা ছেড়ে দিয়ে পড়ে যাচ্ছে অবস্থা!   খারাপ ই লাগলো - হ্যাঁ, খারাপ ই লাগলো!  আমার কোন মানুষকেই বিধ্বস্ত দেখতে ভালো লাগেনা!  কেন একটা মানুষ নিজেকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে যে তার সত্ত্বার অবমাননা হয় - এই প্রশ্ন তখন আমাকে যন্ত্রণা দেয়!
কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি বিচার চাই না - আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে।  আর নাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে -  অন্যের জীবনের প্রতি ক্ষমতাশীলদের উদাসীনতা দূর হবে না!

তবে এখানে আরও কীছূ কথা থেকে যায় - যে নোংরা রাজনীতি সোহেল রানাদের জন্ম দেয়, তার ব্যাপারে আমরা কী করবো? যে নোংরা রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় রানারা অন্যদের জীবনকে তুচ্ছ ভাবতে শেখে - তাদের কী শাস্তি হবে?  আমার পরিষ্কার মনে আছে আমাদের প্রধান মন্ত্রীর কথা - শুরুর দিকে  কী ভাবে তিনি নিজের দলের লোককে বাঁচাবার জন্য রানা প্লাজার ঘটনা নিয়ে ভূল তথ্য দিয়েছিলেন মানুষকে!  আর আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথা আর কী বলবো!  সাভারের জঙ সাহেব যিনি রানা কে ব্যবহার করে অনেক  মানুষের জমি দখল করে তাদের জীবন ধ্বংস করেছেন,  তিনি তো বহাল তবীয়তে আছেন!   রানারা ভূলে যায় যে যাদের ছত্রছায়ায় তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলে, তারা ই তাদের কে নিমিষে বলী দিয়ে দিবে চামড়া বাঁচাবার জন্য।  সোহেল রানার জায়গা পূরণের জন্য অনেক মানুষ আছে - শূন্য স্থান পূরণে কোন সমস্যা হবেনা!

আরেকটা বিষয় হোলো - নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা বরাবর ই উদাসীন একটা জাতী।  এটা অস্বীকার করা হবে মিথ্যাচারের সামিল। আমি কোণো আধুনিক এপার্টমেন্ট এ আগুন লাগলে বের হবার ঊপায় দেখি না - সবখানে দরজা একটা!  আশ্চর্য!  আমাদের এপার্টমেন্ট এ একটাই দরজা - তার প্রায় বিপরীতে খোলা বারান্দা ছিল। এই বারান্দা আমার খুব প্রিয় ছিল।   এই খোলা বারান্দা এস এস এর গ্রিল দিয়ে বন্ধ করা হোলো চোরের ভয়ে।  বারবার আমি আর আমার বড় ভাই বলেছিলাম পুরো বন্ধ না করে অন্তত একটা ছোটো জানালার মতো রাখতে যা ঈমাড়জেণশী তে বের হবার সুযোগ রেখে দেবে কিন্তু একই সাথে নিরপত্তা দেবে।  কে শুনে কার কথা!
সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তার  প্রতি উদাসীনতার প্রতিফলন আমি দেখি প্রতিদিন।  আমরা কোন রাসায়নিক দ্রব্য যখন ব্যবহার করি, আমরা যখন বাড়ী তৈরি করি, আমরা যখন সেতু বানাই - সবকিছুতেই আমাদের এই উদাসীনতা প্রকটভাবে ধরা পরে।  হাতীরঝীল এর ব্রিজ এ দাঁড়াতে আমার ভয় লাগে - রেলিঙ গুলো সব হেলানো বাইরের দিকে এবং তাদের  নীচের দিকে এতো বড় ফাঁক যে বড় মানুষ ই গলে পড়ে যাবে, বাচ্চাদের কথা বাদ ই দিলাম!  আমরা যখন রাস্তায় চলাফেরা করি - তখনো, অন্যের জীবনের কথা বাদ ই দিলাম, নিজের জীবনের নিরপত্যার দিকে আমাদের দৃষ্টি থাকে কম।  সোহেল রানা তো  এই জাতীর ই একজন!  তার ই বা নিরাপত্তার প্রতি এতোটা নজর থাকবে কেন?  তার উপর উনি আবার ক্ষমতাসীনদের আদরের বস্তু ছিলেন!
আমাদের জাতিগত ভাবে পরিবর্তিত হতে হবে।  আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে!  একই সাথে  কঠোর ভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে যাতে নিরাপত্তার প্রতি উদাসীনতা, অন্যের জীবনের প্রতি মমত্বহীনতা দূর হয়!  ছাঁদ থেকে ইট পড়ে তরুণ মারা যায়, কিন্তু কারো বিচার হয় না;  ক্রেন ভেঙে শ্রমিক মারা গেলে কারো জবাব দিতে হয় না!

সময়টা খুব কষ্টের  সাধারণ মানুষদের জন্য!  একটী একটি মৃতদেহ বের করা হয়, খসে যায় আমাদের সত্ত্বার কীছূ অংশ!  কিন্তু এরই মাঝে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে মাথা ঊচূ করে - আমরা আবেগের বসে সোহেল রানার সঠিক বিচার না চেয়ে তাকে দ্রুত ঝুলিয়ে দিতে বলবো না ফাঁসীর দড়ীতে!  আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে - পৃথিবীর জঘন্যতম খূণী কেও সুযোগ দিতে হবে আত্মপক্ষ সমর্থনের এবং আইনজীবীর সাহায্যে নিজেকে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করানোর। আর নাহলে আমরা কখনো সভ্য হতে পারবো না! আর আমাদের আরও নজর রাখতে হবে যেন কোন মহল এই বিচারে বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে অপরাধীদের বাঁচাবার জন্য - তাহলে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটার মতো আমরা অপমান করবো স্বজন হারানোদের, অপমান করবো আমাদের মৃত ভাই বোনদের, আবারো পরাজিত হবো নোংরা রাজনীতির কাছে!

Friday, April 5, 2013

ব্লগার, লং মারচ, প্রগতিশীলতা,বাক স্বাধীনতা - আমাদের ভণ্ডামি!

সব স্বাধীনতাই দায়িত্বশীলতার সাথে ভোগ করতে হয়।  আমরা সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করি - সমাজের একজন সদস্য হিসবে আমার উচিত অন্যদের কথা বিবেচনা করে কাজ করা।  অর্থ উপারজন আমার অধিকার, কিন্তু সেটাও এমনভাবে করতে হবে যেন সমাজের অন্যদের ক্ষতি না হয়।  সব স্বাধিনতার ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য।  বাক স্বাধীনতা এর বাইরে নয়।  যা ইচ্ছা তা বলা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এক নয়।  আমাদের কিছু কিছু ব্লগার এ কথা গুলো ভুলে গিয়েছেন।  ধর্ম কেও পছন্দ না ই করতে পারেন, কিন্তু সেটা তাকে অধিকার দেয় না কারো ধরমানুভুতিতে আঘাত দেবার।  নিজেদের নাস্তিক হিসবে প্রচার করা এসব ব্লগাররা পারতেন পরিশুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করে ধর্মের সাথে তাদের বিশ্বাসের বিরোধটাকে তুলে ধরতে।  তা না করে, নিজেদের উৎকর্ষতা/উন্নততর বুদ্ধিবৃত্তি প্রমান করার তাগিদে হয়ত, তারা গালাগালির মাধ্যমে তাদের মনভাব প্রকাশ করেছেন এবং চরম দায়িত্তহিনতার পরিচয় দিয়েছেন।  অনেকেই আছেন যারা ধর্ম নিয়ে দুটো গালি দিতে পারলে, বা স্রষ্টা নিয়ে একটা বাজে মন্তব্য করতে পারলে নিজেদের খুব বড় মনে করেন।  এবং তাদের অনেকেই সচেষ্ট থাকেন সর্বদা প্রমান করার জন্য যে তারা ধর্ম পালনকারীদের চাইতে মন মানসিকতায় অনেক উচু দরের লোক।  এই ধরনের কিছু মানুষ আজকের উদ্ভুত পরসিথিতির জন্য কি কিছুটা হলেও দায়ী নয়?  উনাদের হঠকারিতার কারনে আজকে অনেকে সুযোগ পাচ্ছেন ধর্মকে ব্যবহার করে অশান্তি সৃষ্টি করার।

একজন কট্টর আওামিলিগার এর সাথে দেখা - উনি বললেন যে উনি থাকবেন প্রথম সারিতে হেফাজত ইসলামির লং মারচে।  আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন যদি শহিদ হয়ে যান সেই আশংকায়।  এই লোক একবার আমার সাথে অনেক দিন কথা বলেননি আমি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু বলেছিলাম বলে।  দেশের এই চরম বিভাজনের দায় কি এইসব ব্লগাররা এড়াতে পারবেন?  আমাদের কি উচিত হবে সব দোষ হেফাজত ইসলামির উপর চাপিয়ে দিয়ে খালাস হয়ে যাওয়া?  দেশের সব মানুষ,  যারা লং মার্চে অংশ নেবে, তারা কি সবাই জামাতে ইসলামির লোক?  তারা কি সবাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধের রাজনীতির অংশ হিসেবে লং মারচে আসবেন?
না!  তাদের অনেকের ধরমানুভুতিতে আঘাত লেগেছে বলে তারা আসছেন - তাদেরকে কিভাবে কে প্ররোচিত করেছে, সেটা অন্য ব্যপার।  তাহলে কি বলা যায়না যে  এটার পেছনে জামাত রাজনীতির যেমন অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে কিছু কিছু ব্লগারদের এবং আমাদের মত লোকদের এবং মিডিয়ার?  আমরা এক পক্ষের কাছ থেকে সংযম আশা করব, আর অন্যদের বলব তোমরা চালিয়ে যাও কারন বাক স্বাধীনতা তোমাদের যা ইচ্ছা বলার অধিকার দিয়েছে, তাহলে আমরা দেশে কিভাবে শান্তি আনব?  এ পর্যন্ত আমি কেবলমাত্র আনু মোহাম্মাদ স্যার কে এবং আমার দুই একজন কলিগকে, যারা ধর্মের প্রতি অনুরাগি নন, দেখেছি ধর্ম নিয়ে বাজে মন্তব্বের প্রতিবাদ করতে।

আমরা, অনেক প্রগতিশীলরা, এমেরিকার বাক স্বাধিনতার কথা উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করি।   এমেরিকা যা করে তার সবই কি ভালো?  আর এমেরিকা কিছু করে বলে সেটা অন্য সবার নকল করতে হবে?  আর এমেরিকাতেও কিছু "ঘৃণা সৃষ্টিকারী বক্তব্য" আইনত দণ্ডনীয়।   পৃথিবীর অন্যান্য অনেক গনতান্ত্রিক দেশে (ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়ে এবং আর অনেক) অন্যের ধর্ম, বরণ বা জাতিকে হেয় করে কথা বলা আইন বিরোধী। এধরণের বক্তব্য তাহলে এখানে নিষিদ্ধ হবে না কেন?  মজার ব্যপার হল আজ যদি কোন মউলভি অন্য ধর্মের লোকদের নিয়ে অশালিন বক্তব্য দিতে শুরু করেন, তখন আমরাই (এবং প্রগতিশীল মিডিয়া) চিৎকার চেচামেচি শুরু করব, গালাগাল শুরু করব এবং করা কর্তব্য আমাদের।  কিন্তু বাক স্বাধিনতার কথা তখন আমাদের মনে থাকবে না।  অথচ  কেও কেও যখন ধর্ম নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করবেন, আমরা সেটাকে সমর্থন দেব বাক স্বাধিনতার নামে!  আমাদের এই ভণ্ডামি বিভক্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।  কিন্তু আমাদের সেটা মনে থাকবে না।

আর লং মারচ প্রতিহত করার জন্য যারা উঠে পরে লেগেছেন তাদের মনে রাখা উচিত এটা মানুষের  অধিকার।  তারা কারো বিচার চাইতে পারে - এটা তাদের অধিকার যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গনতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সন্ত্রাসের আশ্রয় না নিবে।  আজ যদি অন্য কেও, এমনকি বিএনপি ও লং মারচ করত, আপনারা  প্রতিহত করার কথা বলতেন?  হরতাল যদি অধিকার হয় তবে লং মারচ ও।  হ্যাঁ - অনেকে বলবেন যে এই লং মারচে অনেক মারমুখি লোক থাকবে এবং সম্ভাবনা আছে ভেজাল হবার।  কিন্তু গনতন্ত্রের কাছে সেটা বিবেচ্য নয় - যখন তারা সন্ত্রাস করবে, তখন তাদের কে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিতে হবে - তার আগে নয়।

হেফাজত ইসলামির উচিত ছিল লং মার্চ না করে অন্য কোন পদ্ধতি যা সহিংসতা সৃষ্টির সুযোগ করে দেবেনা, তা ব্যবহার করা!  আর দেশে যখন মাজার পুজা হয়, লং মারচের কথা তখন তাদের মাথায় আসে না কেন?  পিরদের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে যখন পরে থাকে মুরিদ, তখন কোথায় থাকে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা?  দেওয়ানবাগি যখন চাঁদে নিজের চেহারা দেখা গেছে বলে দাবি করে , ইমাম শাফি তখন কোন পরদার আড়ালে থাকেন?
এই ভয়াবহ কাজগুলো ইসলামের বেশি ক্ষতি করছে, সাধারন মুসলমানদের কে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে - এসব কাজের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল।  তাদের উচিত ছিল ঘুষের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অনেক আগে লং মারচ করা,  ফালানি কে মেরে যখন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, তখন লং মারচ করা!    তাহলে বুঝতাম আসলেই আল্লাহর/নবির(সঃ) প্রতি ভালবাসা থেকেই আজকের এই মারচ সংগঠিত করছেন তারা!  কিন্তু তা  তারা করেননি - কারন সেখানে রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত নেই!

বিভক্তির এই ঘোলা জলে মাঝখান থেকে কিছু সাধারন লোকের জীবন যাবে, আমাদের ব্যবসা/বানিজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে, বহির্বিশ্ব থেকে বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে  - আমরা পত্রিকা পড়ে হা হুতাশ করব।  তারপর আবার যেই কি সেই!  প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বেচে খাবে, আর ধর্ম ব্যবসায়ীরা খাবে ধর্ম বেচে!  বিজয় হবে নোংরা লোকজনদের, নোংরা রাজনীতির আর পরাজয় হবে মানুষের, মানবতার!  এখন কেও আর বিশ্বাজিতের কথা বলেনা, কেও সাগর-রুনির কথা বলেনা, পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু হয়েছিল বলে মনে হয়না, ফালানি যে ঝুলছিল তাড়কাটার বেড়া থেকে সেটা তো কোন বিষয় ই নয়! চমৎকার!
--------------------------
এই লাইন টা  যদি পড়ছেন এখন, তাহলে ধরে নেয়া যায় এই বিশাল লেখার পুরোটা পড়েছেন।  অনেক ধন্যবাদ!  আসলে - মনটা খুব তেঁতে আছে চারদিকে বিভিন্ন ধরনের উগ্রতার উদ্ভব দেখে!  না লিখে পারলাম না!

Tuesday, March 26, 2013

অস্বস্তি...


শাহজালাল উনিভারসিটি থেকে ফিরছি কনফারেন্স সেরে।  মাঝপথে একটা স্টেশন থেকে ২০/২৫ জন তরুন, তরুণী হুড়মুড় করে উঠল আমাদের বগীতে।  তাদের একজন জানালা দিয়ে তার মাল-সামালা ঠেলে ঢুকিয়ে  দিয়েছিল সীট দখলের জন্য।  তার মাল এসে পরেছিল আমার কলিগের পায়ের উপর।  আমার কলিগ বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে চাইছিল - আমি বাধা দিলাম।  কে জানে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কিছু বলতে গেলে!
এরা ছাত্র, তরুন।  ছাত্র দেখলে আমি একসময় খুব আনন্দিত হতাম - শিক্ষার সাথে জড়িত প্রানবন্ত জীবন - খুশি হওয়ার কথাই।  আমি নিজে একজন শিক্ষক।  তরুন, সম্ভাবনাময় প্রানের কাছাকাছি থাকাটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
কিন্তু খুশির সাথে এখন আরো একটা অনুভূতি যুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে যখন দলবদ্ধ অবস্থায় ছাত্রদের দেখি - সে অনুভূতিটা হচ্ছে অস্বস্তি!  অথবা ভয় ও বলা যেতে পারে।  মনোবিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন ভালো।  আমাদের বগিতে উঠা এই ছাত্ররা নৃবিজ্ঞানের - একটা শিক্ষা সফর থেকে ফিরছে।  আমার খুব কৌতূহল জানার ওরা কি শিখল, কি জানল!  ওদের সাথে কথা বলার জন্য, জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য অস্থির লাগছিল।  পরে একজনের সাথে কথা হল - অনেক কিছু জানলাম।  ভাল ছেলেঃ)

এখন অস্বস্তির কথাটা বলি।  বিশ্বজিতের কথা আমি ভুলতে পারিনা!  ওর রক্তমাখা অসহায় ছবিটা আমার মন থেকে কিছুতেই যেতে চায় না!  আমাদেরই কিছু ছাত্র তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল দিনে দুপুরে!
আমাদেরই কিছু ছাত্র রাস্তায় ভাংচুর করেছিলো কিছুদিন আগে বিনা পয়সায় মদ না পাওয়ার জন্য।  ঢাকা ইউনিভার্সিটির বেশ কিছু ছাত্র তাদের ই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রাক্তন ছাত্র কে মেরে আধমরা করে দিয়েছিল।  আর যখন সেই লোকের বৃদ্ধ বাবা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল আমাদের এই ছাত্ররা।  কেন?  কারন তাদের বাসের গতিরোধ করেছিলেন বেচারা ভদ্রলোক!  একজন মানুষের, একজন পিতার এত বড় অপমান সহ্য করত আমার খুব কষ্ট হয়েছিল!  এই ছাত্ররা কি অনুশোচনা বোধ করেছিলো পরে?  জানিনা!  হয়ত তারা চা, সিগারেট খেতে খেতে অহংকার করে বলেছিল,"বাপ, বেটা দুইটারেই দিছি!  কত বড় সাহস আমাগো বাসের পথ আটকায়!"  আমাদের তারুন্যে দেখেছি পাড়ার মস্তানরাও বয়স্ক কাওকে দেখলে কিছুটা হলেও সংযত আচরন করত।
যে ছাত্রগুলো আমাদের বগিতে উঠল, তারা যে কোন তুচ্ছ কারনে আমার বা আমার সহকর্মীর উপর ঝাঁপিয়ে পরবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
অনেকে বলবেন, "এরা ছাত্র না, অছাত্র!"  আমি এক বুদ্ধিজীবীর কলাম পরেছিলাম বিশ্বাজিত হত্যার পর।  উনি অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে যা বললেন তাতে মনে হল ছাত্র লীগের ভেতর অছাত্র ঢুকে বসে আছে - এই হত্যাকাণ্ড তাই ছাত্রলীগের উপর একতরফা চাপানো ঠিক না!  এসব কথা বলে কি আমরা আসল সমস্যা আড়াল করার চেষ্টা করছিনা?  এরা কি অছাত্র, নাকি আমাদের ছাত্রদের বড় একটা অংশের ভেতর ঋণাত্মক প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে?  আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার - এখনই!
আমার এই ব্লগ সব ছাত্রদের অভিযুক্ত করে নয়।  কাজেই যারা এধরণের আচরনের সাথে জড়িত নয়, তারা মন খারাপ করবে না:)