Monday, May 11, 2015

ঢাকাইয়ানদের কথা

ফজরের সালাত আদায় করিবার জন্য উঠিয়া আমার চারিপাশে মশাদের অজস্র মৃতদেহ দেখিয়া প্রমান পাইলাম যে আমি স্বপ্ন দেখিতেছিলাম না - আমি বাস্তবিকই সমস্ত রাত্রি আধো ঘুম, আধো জাগরণে মশককূলের সাথে সমরে লিপ্ত ছিলাম!  মেজাজ খারাপ!  সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে যদি রাতে একটু ঘুমানো না যায় তাহলে বাঁচি কি করে!  গরমে মশারি টাঙ্গালে ফ্যানের বাতাস পাওয়া যায় না।  আর মশারি না দিলে মনে হয় আমার বাসার মশাগুলো সারা পাড়ার মশাদের দাওয়াত দেয় ডিনারের! 

ছোটবেলায় কলকাতার একটা বহুল প্রচলিত কথা শুনতাম প্রায়ই - "রেতে মশা, দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি।"  আমি কলকাতার খবর জানিনা - তবে ঢাকার খবর ভালভাবেই জানি!  আমাদের এখানে মাছির উতপাত এখন কম, বেচারাদের বংশবৃদ্ধির হার কমে গেছে - সবই ফরমালিনের ফযিলত!  কিন্তু মশারা এখানে বহাল তবিয়তে আছে।  তাদের ভাগ্য ভালো তারা তাদের শিশুদের বৃদ্ধির জন্য মানুষের ফেলে দেয়া খাদ্যদ্রব্যেকে ব্যবহার করে না - নাহলে এতদিনে তাদেরও কেল্লা ফতে হয়ে যেত। 

যাই হোক - শুধু মশা কি ঢাকাইয়ানদের (মানে ঢাকাবাসীদের) একমাত্র ভোগান্তির কারন?  মোটেই না!  গর্ব করে বলতে পারি রাস্তার ট্র্যাফিক জ্যাম আমার পনেরো মিনিটের রাস্তাকে দেড় ঘণ্টার রাস্তায় পরিণত করে দেয় খুব সহজেই!  কোন ব্যপারই না!  আর যদি গরমকাল হয় তবে তো কথাই নেই - গাদাগাদি ভিড়ে বাসে যখন আমরা থাকি, তখন সরসর করে সব ঘাম ঊর্ধ্বাঙ্গ বেয়ে নেমে গিয়ে জমা হয় আন্ডারওয়েরে যা খব দ্রুত চটকে লেগে যায় নিতম্বের সাথে!  কি আনন্দায়ক অনুভুতি!

আর সবুজের বংশ নির্বংশ করে ফ্ল্যাট নির্মাণের তোরে ঢাকা শহর থেকে নিরমল বায়ু হারিয়ে গেছে অনেক আগে - মাঝে মাঝে দাঁত কিচমিচ করে বালিতে - মনে হয় দাঁত মেজে ফেলা যাবে, টুথপেস্টের খরচটাও বেঁচে যাবে!
হে আল্লাহ - এতসব নাগরিক সুযোগসুবিধা থেকে কবে মুক্তি পাব!  

Sunday, May 3, 2015

একান্নবর্তি পরিবার

সাত সকালে ইস্তারিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না - মেজাজ খারাপ!  একটু পরেই বের হতে হবে অফিসের জন্য।  বোঝা গেল ইস্তারিটা ভাবি রাতে নিয়ে গিয়েছিল, ফেরত দেয়নি!  এখন ভাই-ভাবি দুজনই ঘুমাচ্ছে - রুম বন্ধ।  কি যন্ত্রণা!  আরেকটা ইস্তারি কিনে ফেললেই হয় আসলে - তাহলে আর এধরণের ঘটনা ঘটবে না।  কিন্তু আমি এটা করব না!  কেন করব না তার ভালো অনেক কারন আছে।  আমরা ৩ ভাই একসাথে থাকি মাকে সাথে নিয়ে পাশাপাশি দুটা ফ্ল্যাট এ - একান্নবর্তি পরিবার।  বোনটাকেও যদি নিয়ে আসতে পারতাম, তবে আরও ভালো হত!  যাই হউক - আমাদের এই একসাথে থাকাতেই আনন্দ - সেজন্যই আমি আরেকটা ইস্তারি কিনব না - যদি কিনি তবে এই ভাগাভাগি করার আনন্দটা আর পাওয়া যাবে না!  আজ যেমন ভাবির উপর আমার রাগ হয়েছে, তেমন আমিও আমার ভাইদের/ভাইদের বউদের/মায়ের/বউয়ের রাগের কারন হই প্রায়ই।  কাজেই এটাকে ধরার কোন প্রয়োজন আমার নেই।

আমরা একসাথে থাকি বলেই মাঝে মাঝেই ঠুকাঠুকি হয়ে যায় - এটা স্বাভাবিক!  মানুষে মানুষে ঠুকাঠুকি হবে না তো কি মানুষে আরে গরুতে ঠুকাঠুকি হবে??  কিন্তু আমরা সেইসব সাময়িক মন কষাকষিগুলোকে পাত্তা দেই না।  দুদিন ঝগড়া করে আবার ঠিকই মিলে যাই!  আমি বা আমার ছোট ভাই যদি বাসায় না থাকি আর ভালো কিছু যদি রান্না হয়ে থাকে, তবে ভাবি সে রান্নার কিছুটা চুরি করে তুলে রাখে আমাদের জন্য, মাকে জানতেও দেয় না।  আমি লিনার (আমার ছোট ভাইয়ের বউ) রান্না করা মাছ খুব পছন্দ
করি।  সেটা জানে বলে লিনাই মাছ রাঁধে বাসায়, আমার কথা চিন্তা করে।  আমি একবার অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম বেশ -  আমি তখন আমার ভাইদের অস্থিরতা দেখেছি।  এতসব ভালবাসাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আমি যখন বাসায় ফিরি - তখন দেখি আমার আর আমার ভাইদের ছেলে-মেয়েগুলো একসাথে খেলছে, আড্ডা মারছে।  প্রায় প্রতিদিনই দেখি আমার ছোট ছেলেটা তার রোদরশি আপুকে জালাচ্ছে, আফ্রিদা তার বড় কোন এক ভাইয়ের ঘাড়ে চড়ে বসে আছে।  অনেক সময় গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় চিল্লাচিল্লি শুনে - দেখা যায় আমার ভাতিজাটা চুরি করে রাতে চলে এসেছে এপাশে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখার জন্য তার চাচি আর ভাইদের সাথে - সাথে চলছে চিপ্স আর সোডার পার্টি!  আমার বউটা ফুটবল পাগল!

আমার কাছে এই দৃশ্যগুলো অনেক মুল্যবান এবং আমার ক্ষুদ্র তুচ্ছ ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা - এসবের কাছে আমি অমুল্য এই সম্পদগুলোকে বিসর্জন দিতে পারব না!  আমাদের সন্তানেরা আমাদের বৃহত্তর  স্বার্থ - তাদের সঠিকভাবে ভালবাসায় বেড়ে উঠা জরুরী, তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করতে শেখাটা একান্ত দরকার।  আমি তাদের ভালর জন্য আমার ব্যক্তিগত ছোটখাটো আবেগগুলোকে ভুলে যাব নির্দ্বিধায়!
জাতিয় পর্যায়েও এই কথা সত্য।  আমাদের মতের অমিল হবে, তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকবে - কিন্তু ন্যায় এবং নীতির জন্য, মানুষের ভালর জন্য ঐক্যবদ্ধতাই হউয়া উচিৎ আমাদের মৌলিক লক্ষ্য!