Tuesday, March 26, 2013

অস্বস্তি...


শাহজালাল উনিভারসিটি থেকে ফিরছি কনফারেন্স সেরে।  মাঝপথে একটা স্টেশন থেকে ২০/২৫ জন তরুন, তরুণী হুড়মুড় করে উঠল আমাদের বগীতে।  তাদের একজন জানালা দিয়ে তার মাল-সামালা ঠেলে ঢুকিয়ে  দিয়েছিল সীট দখলের জন্য।  তার মাল এসে পরেছিল আমার কলিগের পায়ের উপর।  আমার কলিগ বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে চাইছিল - আমি বাধা দিলাম।  কে জানে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে কিছু বলতে গেলে!
এরা ছাত্র, তরুন।  ছাত্র দেখলে আমি একসময় খুব আনন্দিত হতাম - শিক্ষার সাথে জড়িত প্রানবন্ত জীবন - খুশি হওয়ার কথাই।  আমি নিজে একজন শিক্ষক।  তরুন, সম্ভাবনাময় প্রানের কাছাকাছি থাকাটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
কিন্তু খুশির সাথে এখন আরো একটা অনুভূতি যুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে যখন দলবদ্ধ অবস্থায় ছাত্রদের দেখি - সে অনুভূতিটা হচ্ছে অস্বস্তি!  অথবা ভয় ও বলা যেতে পারে।  মনোবিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন ভালো।  আমাদের বগিতে উঠা এই ছাত্ররা নৃবিজ্ঞানের - একটা শিক্ষা সফর থেকে ফিরছে।  আমার খুব কৌতূহল জানার ওরা কি শিখল, কি জানল!  ওদের সাথে কথা বলার জন্য, জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য অস্থির লাগছিল।  পরে একজনের সাথে কথা হল - অনেক কিছু জানলাম।  ভাল ছেলেঃ)

এখন অস্বস্তির কথাটা বলি।  বিশ্বজিতের কথা আমি ভুলতে পারিনা!  ওর রক্তমাখা অসহায় ছবিটা আমার মন থেকে কিছুতেই যেতে চায় না!  আমাদেরই কিছু ছাত্র তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল দিনে দুপুরে!
আমাদেরই কিছু ছাত্র রাস্তায় ভাংচুর করেছিলো কিছুদিন আগে বিনা পয়সায় মদ না পাওয়ার জন্য।  ঢাকা ইউনিভার্সিটির বেশ কিছু ছাত্র তাদের ই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রাক্তন ছাত্র কে মেরে আধমরা করে দিয়েছিল।  আর যখন সেই লোকের বৃদ্ধ বাবা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল আমাদের এই ছাত্ররা।  কেন?  কারন তাদের বাসের গতিরোধ করেছিলেন বেচারা ভদ্রলোক!  একজন মানুষের, একজন পিতার এত বড় অপমান সহ্য করত আমার খুব কষ্ট হয়েছিল!  এই ছাত্ররা কি অনুশোচনা বোধ করেছিলো পরে?  জানিনা!  হয়ত তারা চা, সিগারেট খেতে খেতে অহংকার করে বলেছিল,"বাপ, বেটা দুইটারেই দিছি!  কত বড় সাহস আমাগো বাসের পথ আটকায়!"  আমাদের তারুন্যে দেখেছি পাড়ার মস্তানরাও বয়স্ক কাওকে দেখলে কিছুটা হলেও সংযত আচরন করত।
যে ছাত্রগুলো আমাদের বগিতে উঠল, তারা যে কোন তুচ্ছ কারনে আমার বা আমার সহকর্মীর উপর ঝাঁপিয়ে পরবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
অনেকে বলবেন, "এরা ছাত্র না, অছাত্র!"  আমি এক বুদ্ধিজীবীর কলাম পরেছিলাম বিশ্বাজিত হত্যার পর।  উনি অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে যা বললেন তাতে মনে হল ছাত্র লীগের ভেতর অছাত্র ঢুকে বসে আছে - এই হত্যাকাণ্ড তাই ছাত্রলীগের উপর একতরফা চাপানো ঠিক না!  এসব কথা বলে কি আমরা আসল সমস্যা আড়াল করার চেষ্টা করছিনা?  এরা কি অছাত্র, নাকি আমাদের ছাত্রদের বড় একটা অংশের ভেতর ঋণাত্মক প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে?  আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার - এখনই!
আমার এই ব্লগ সব ছাত্রদের অভিযুক্ত করে নয়।  কাজেই যারা এধরণের আচরনের সাথে জড়িত নয়, তারা মন খারাপ করবে না:)