Tuesday, July 26, 2016

কবরের শিশুকে

কবরের শিশুকে ---
"জন্মেই গিয়েছ চলে টপকে বেড়াজাল
ক্ষণিকের অতিথি তুমি!
আমি বেঁচে আছি কত দশক, দশক!
কে তবে ভাগ্যবান?  আমি, না তুমি?
কলুষ ছোঁয়নি তোমায়
ছোঁয়নি আঁধার!
আমাকে ছুঁয়েছে কত ঘিনঘিনে কালো!
শুদ্ধতা বিনষ্ঠ করে কত পুঁজ, কাঁদা
ঢেকেছে আমার দেহ কি পিছল পাপে!
তোমার হিসেবের খাতা শুভ্র কেমন!
সানন্দে নেচে নেচে অপার্থিব দীপ
তোমার আঁধার পথ করে দেবে আলো!
আমায় কি দখলে নেবে নরকের রাত?
দ্বিধাহীন হয়ে যেতাম কবরের শিশু
স্রষ্টা আমার, তুমি দিলেনা সুযোগ!"

Sunday, July 3, 2016

প্যান আমেরিকান ফ্লাইট ১০৩ এবং কিছু ব্যাখ্যা

একটু ব্যাখ্যা/একটু ইতিহাস - ১৯৯৮ সালে যখন লিবিয়ান সন্ত্রাসীরা Pan American এর 103 নাম্বার ফ্লাইটটিকে বোমা মেরে ধ্বংস করে, তখন ২০০ এর উপর যাত্রী মারা যান।  সেসব যাত্রিদের ভেতর ২ মাস বয়সের শিশু থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সি শিশুও ছিল।  
আমি যদি কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমানকে জিজ্ঞেস করি সে কোন শিশুকে হত্যা করবে কিনা, তাঁর উত্তর হবে নিশ্চিত "না!"  মানবিক দিক থেকে এটা বর্বর, আর ইসলামে ত এটা নিষিদ্ধই - যুদ্ধকালীন সময়েও আমরা কোন নিরস্ত্র নিরীহ নারী পুরুষ বা শিশু বা বৃদ্ধদের মারতে পারব না  - এটাই ইসলামের নীতি!
সেই নীতি অনুসরণ করে নির্দ্বিধায় বলা যায় - অন্য সব যাত্রীর কথা যদি বাদও দেই - শুধু শিশুযাত্রী হত্যার জন্যই প্যান আমেরিকান বিমান ধ্বংস করা ছিল ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর গর্হিত অপরাধ। 
আমার জানামতে এই গুরুতর অপরাধের কোন প্রতিবাদ আমাদের কোন ইমাম/আলেম সে সময় করেন নি - অনেকে হয়ত তার উলটোটাই করেছেন।  এবং আমি অনেক সময় অনেক রকম অজুহাত শুনেছি এধরনের অপরাধকে ন্যায্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
আবার সাদ্দামের মত নৃশংস মানুষকেও আমাদের অনেক ইমাম সমর্থন জানিয়েছিলেন ইরান এবং কুয়েত আক্রমণের সময় এবং তা করতে গিয়ে প্রকারান্তরে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদকে সহযোগিতা করেছেন! অনেকে আবার সাদ্দাম কে ইমাম মাহাদি হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিলেন!
আমাদের ধর্মীয় শিক্ষাগুরুরা যদি এমন নীরবতা অবলম্বন করেন বা সক্রিয় সমর্থন দেন ভয়াবহ অন্যায়ের তাহলে আমাদের মদ্ধে থেকে অনেকেই সে রাস্তাকেই সঠিক বলে মনে করবেন!
আমাদের ইমামদের প্যান আমেরিকান বিমান ধংসের ব্যপারে নীরবতা এবং তাঁদের পরবর্তী নিষ্ক্রিয়তা বা এসব কাজে তাঁদের অনেকের সক্রিয়/সবাক সমর্থনের কারনেই আজকে জঙ্গিবাদের উত্থান সহজ হয়েছে, সেকারনেই আজকে আমাদের অনেকে বিপথগামী হয়েছে, সজন্যই আজ অনেক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমাদের কাওকে কাওকে ব্যবহার করে ইসলামের নামে অপবাদ ছড়াতে পারছে। 
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অনেক আলেম একসাথে ফতোয়া দিয়েছেন সন্ত্রাসকে হারাম আখ্যা দিয়ে।  কিন্তু এই পদক্ষেপ সময়োচিত হলনা, এটা আরো আগেই আসা উচিত ছিল।  আর শুধুমাত্র হারাম আখ্যা দিলে হবেনা - প্রতিনিয়ত এসবের বিরুদ্ধে মসজিদ মাদ্রাসায় আলোচনা চলতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসব কারনেই বাংলাদেশের এবং সারা পৃথিবীতে উদ্ভুত সন্ত্রাসবাদের জন্য আমাদের ইমাম/আলেমদের নিষ্ক্রিয়তাকে, নীরবতাকে দায়ি করেছিলাম আমার একটা এফবি পোস্ট এ - আর কিছু না!  যারা কষ্ট পেয়েছেন তাঁদের জন্য আমার এই ব্যখ্যা - আমাকে কেও যদি ভুল প্রমানিত করতে পারেন তবে আমি নির্দ্বিধায় সে ভুল স্বীকার করে নেব।
আমাদের মুসলমানদের উচিত ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানে এবং শিক্ষায় নিজেদের শক্তিশালী করে তোলা, নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ইসলামের মানবতাকে মনেপ্রাণে ধারন করা!  আর তাহলেই আমাদের উপর কেও অন্যায় করতে সাহস করত না এবং আমরাও পৃথিবীর বিভিন্ন অন্যায়ের সক্রিয় বরোধিতা করতে পারতাম।  এবং এসব কাজে অগ্রগামী থাকার কথা ছিল আমাদেরই ধর্মীয় শিক্ষাগুরুদের!
কিন্তু সেটার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি!  
আমরা আজ বোমাবাজি করে, তলোয়ার চালিয়ে মানুষ মারতে ব্যাস্ত!  আজ প্রতিটি মুসলিম দেশ অন্যায় অবিচারে এবং দুর্নীতিতে জর্জরিত!  আজ আমরা আমাদের প্রিয় ধর্মকে নিজেরাই উপেক্ষা করছি - হয় একেবারে এটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি, নয়ত এটাকে নামকাওায়াস্তে পালন করছি, নয় জ্ঞানহীনভাবে এটাকে প্রচারের চেষ্টা করছি! 
আল্লাহ বা তাঁর নবী (সাঃ) কিন্তু অন্ধভাবে কোন ইমামকে অনুসরণ করতে বলেননি আমাদের - বরং আমাদের সবাইকে জ্ঞান আহরণ করতে বলেছেন, নিজেদের ধর্মকে বুঝতে বলেছেন!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন।  আল্লাহ আমার ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার নিয়তকে শুদ্ধ করে দিন!  আমাদের সবাইকে তিনি শান্তি দিন!                

Friday, December 4, 2015

মুতের ঝিল

রঞ্জন, নুরুযযামান আর আমি ভার্সিটি থেকে ফিরছি রিকশায়।  হাতিরঝিলের কাছে এসেই দমবন্ধ হবার জোগাড় হল প্রস্রাবের গন্ধে!  রাগের মাথায় নুরুযযামান বলে উঠল - "এইডা হাতিরঝিল না, এইডা মুতেরঝিল!"  হাসতে হাসতে পেট ব্যথা!
ওদের ছেড়ে দিয়ে বাসায় আসতে আসতে ভাবলাম - জাতিগত ভাবেই আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে।  যত্রতত্র মুত্রত্যগ করার একটা বদ অভ্যাস আমাদের আছে।  আর ঘরের বাইরে এই উদার মুত্রত্যগের বিষয়টা আমাদের কতটা অভ্যেসগত সেটা বোঝা যায় আমাদের এক প্রতিবেশীকে দেখলে।  আমাদের এই প্রতিবেশী বাসা থেকে বের হয়ে সামনের ড্রেনে পেশাব করেন।  আশ্চর্য ব্যপার - পশুরা যেমন তাদের মুত্র দিয়ে নিজ এলাকা চিহ্নিত করে অনেকটা সেরকম। 
আরেকটি অভ্যেসের কথা না বলে পারছি না।  নাকের সাথে আমাদের কিছু আঙুলের যে সম্পর্ক, সেটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার যা জনসমক্ষে প্রদর্শন মারাত্মক দৃষ্টিকটু।  অথচ নাকের সাথে আঙ্গুলের এই সখ্যতা আমরা বিনা দ্বিধায় এবং যত্রতত্র প্রদর্শন করে প্রতিদিন দৃষ্টিদূষণ করছি।  পথে ঘাটে একান্ত মনোযোগের সাথে এই কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় আমাদের অনেককেই।
আমাদের বাসস্থান এবং তার চারপাশ এবং আমাদের শহর পরিচ্ছন্ন এবং দৃষ্টিনন্দন রাখার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে আমাদেরই যেখানে সরকার শুধুমাত্র সাহায্যের হাত বারিয়ে দেবে মাত্র।  পরিচ্ছন্নতার সাথে দারিদ্র্যের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করিনা।  আমার বাড়িঘর যতই ভাঙ্গাচুরা হোক না কেন, আমি এটাকে ঝকঝকে তকতকে রাখতে পারি একটু সচেতন হলেই, একটু চর্চা করলেই।  আমি থুয়াক থুয়াক করে যেখানে সেখানে থুতু ফেললাম না, আমি সর্বদা ঝাড়ু ব্যবহার করলাম, যত্রতত্র ময়লা না ফেলে এক জায়গায় জড়ো করে রাখলাম, চিপ্সের প্যাকেটটা ঢীল দিয়ে ফেলে দিলাম না গাড়ির জানালা দিয়ে - এরকম একটু আধটু অভ্যেস করে নিলেই কিন্তু অনেক বেশী বাসযোগ্য হবে আমাদের চারপাশ। 
মোটামুটিভাবে আমাদের সবারই বাসা থেকে আবর্জনা সরানোর লোক আছে।  আমরা রিকশা থেকে বা গাড়ির জানালা দিয়ে চিপ্সের প্যাকেট বা পানির বোতলটা রাস্তায় বা যেখানে ইচ্ছা সেখানে না ফেলে বাসায় এনে ডাস্টবিনে ফেললে কি হয়? 
জাহাজে  করে সেন্ট মারটিন্স যেতে যেতে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল - চারপাশে অদ্ভুত সুন্দর সমুদ্র আর গাংচিল!  অথচ চারপাশ থেকে এই সুন্দর সমুদ্রে বৃষ্টির মতো জাহাজ থেকে ঝরে পড়ছে পানি আর সোডার বোতল, চিপ্স আর বিস্কিটের প্যাকেট!  এত সৌন্দর্য নষ্ট করার ইচ্ছে হয় কিভাবে! এতটুকু খারাপও লাগে না!   যারা এই কাজগুলা করেছে তারা কিন্তু শিক্ষিত।  

Tuesday, September 22, 2015

ছোট্ট কবিতা

আমার কলিগ মিনহাযের অনেক প্রতীক্ষিত বিয়ে উপলক্ষে একটা কবিতা লিখেছিলাম :)  তার জীবন আল্লাহ সুখময় করুক, আনন্দের করুক এই দোয়া করি।
 -------
"আরও কয় সূর্যোদয় আগে চিরসঙ্গিনি যদি হতে
নিঃসঙ্গ যেত না এই উতলা বৈশাখ!
বিগত বসন্তে যদি বেঁধে নিতে মন যুগল বাঁধনে
অবলীলায় পেরুতাম সুকঠিন যত বাঁক!
দৃষ্টির ঘৃতকুমারি ছোঁয়া যদি দিতে দুই চাঁদ আগে
ক্ষরায় পুড়ত না এই অভাবি জমিন!
আরো দুই চাঁদ আগে যদি হত দেখা তোমার আমার!
আরো দুই চাঁদ আগে,
এ দু'হাতে রাখতে যদি সুচারু দু'হাত
এতদিন, নিঃসঙ্গ কি থাকতো এই দশটি আঙ্গুল!
দুরন্ত ঘড়ির কাঁটা থাকেনি তো থেমে!
তবু বাঁচোয়া - অনেক তৃষিত প্রতীক্ষা শেষে এসেছ এখন!
স্রষ্টার কি অবোধ্য কৌশল!
ঝেড়ে ফেলে সমস্ত ছিটেফোঁটা দ্বিধা
আমরণ অংশীদারিত্তে আজ বাঁধবো জীবন!
তুমি আর আমি, আমি আর তুমি!"


Saturday, August 15, 2015

চলে যেতে ইচ্ছে করে

মন ভীষণ খারাপ - তাই মনমরা একটা কবিতা -

"ভুলে-ভালে বেমানান সব রঙে এঁকেছিলেম ছবি
ভুলে-ভালে অনেক বেসেছিলেম ভালো
যে সমীকরণ না মেলার
তাকে মেলাবার প্রানান্ত প্রচেষ্টায়
দলা পাকিয়ে ডাস্টবিনে ফেলেছি জীবনের অনেক দিন ও রাত।
দু'পায়ে ক্লান্তির ভারি নোঙর এখন।
অনেক হয়েছে বেলা
অনেক, অনেক ছুটোছুটি অকারণ!
এখন আমি পার্থিবতার বেড়াজাল টপকে
এক ছুটে চলে যাব অনন্তেরর দিকে
পিছু ফিরে তাকাবোনা একবারও
চোখ পড়ে যেতে পারে প্রিয়দের চোখে!
বাহনের জানালা দিয়ে অনেক দেখেছি
প্রিয় অবয়বের ক্ষুদ্র হতে হতে
দিগন্তের সাথে মিলিয়ে যাওয়া,
ঝাপসা পর্দার আড়ালে!
পিছু ফিরে তাই দেখব না এবার!
আমার মা বলেন -
"তোর বাবা যেন আমার কোলে মাথা রেখে
হেঁটে চলে গেল ফুলের রাস্তা দিয়ে!
মৃত্যু এত সহজ হয়!"
আমি আমার বাবার এই মৃত্যু
নিজের জন্য ঘোর কামনায়,
দিন রাত...
সুদুর অতীতের স্মৃতি আমাকে বলে -
"তুই তো প্রায় গিয়েছিলি সেদিন,
জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর আরেকটি শুমারি হয়ে!"
কেন এই বর্ধিত জীবন?
ফিরে যাওয়া সারি সারি মানুষের নির্যাসে
বেড়ে উঠা সবুজ অরন্য দেখে দেখে ভাবি -
আমিও একদিন পুষ্টি জোগাব তরুণ বৃক্ষের!
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের যুগল পালা
মাঝে মাঝে বড় বেশী বোঝা মনে হয়! "

Monday, May 11, 2015

ঢাকাইয়ানদের কথা

ফজরের সালাত আদায় করিবার জন্য উঠিয়া আমার চারিপাশে মশাদের অজস্র মৃতদেহ দেখিয়া প্রমান পাইলাম যে আমি স্বপ্ন দেখিতেছিলাম না - আমি বাস্তবিকই সমস্ত রাত্রি আধো ঘুম, আধো জাগরণে মশককূলের সাথে সমরে লিপ্ত ছিলাম!  মেজাজ খারাপ!  সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে যদি রাতে একটু ঘুমানো না যায় তাহলে বাঁচি কি করে!  গরমে মশারি টাঙ্গালে ফ্যানের বাতাস পাওয়া যায় না।  আর মশারি না দিলে মনে হয় আমার বাসার মশাগুলো সারা পাড়ার মশাদের দাওয়াত দেয় ডিনারের! 

ছোটবেলায় কলকাতার একটা বহুল প্রচলিত কথা শুনতাম প্রায়ই - "রেতে মশা, দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি।"  আমি কলকাতার খবর জানিনা - তবে ঢাকার খবর ভালভাবেই জানি!  আমাদের এখানে মাছির উতপাত এখন কম, বেচারাদের বংশবৃদ্ধির হার কমে গেছে - সবই ফরমালিনের ফযিলত!  কিন্তু মশারা এখানে বহাল তবিয়তে আছে।  তাদের ভাগ্য ভালো তারা তাদের শিশুদের বৃদ্ধির জন্য মানুষের ফেলে দেয়া খাদ্যদ্রব্যেকে ব্যবহার করে না - নাহলে এতদিনে তাদেরও কেল্লা ফতে হয়ে যেত। 

যাই হোক - শুধু মশা কি ঢাকাইয়ানদের (মানে ঢাকাবাসীদের) একমাত্র ভোগান্তির কারন?  মোটেই না!  গর্ব করে বলতে পারি রাস্তার ট্র্যাফিক জ্যাম আমার পনেরো মিনিটের রাস্তাকে দেড় ঘণ্টার রাস্তায় পরিণত করে দেয় খুব সহজেই!  কোন ব্যপারই না!  আর যদি গরমকাল হয় তবে তো কথাই নেই - গাদাগাদি ভিড়ে বাসে যখন আমরা থাকি, তখন সরসর করে সব ঘাম ঊর্ধ্বাঙ্গ বেয়ে নেমে গিয়ে জমা হয় আন্ডারওয়েরে যা খব দ্রুত চটকে লেগে যায় নিতম্বের সাথে!  কি আনন্দায়ক অনুভুতি!

আর সবুজের বংশ নির্বংশ করে ফ্ল্যাট নির্মাণের তোরে ঢাকা শহর থেকে নিরমল বায়ু হারিয়ে গেছে অনেক আগে - মাঝে মাঝে দাঁত কিচমিচ করে বালিতে - মনে হয় দাঁত মেজে ফেলা যাবে, টুথপেস্টের খরচটাও বেঁচে যাবে!
হে আল্লাহ - এতসব নাগরিক সুযোগসুবিধা থেকে কবে মুক্তি পাব!  

Sunday, May 3, 2015

একান্নবর্তি পরিবার

সাত সকালে ইস্তারিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না - মেজাজ খারাপ!  একটু পরেই বের হতে হবে অফিসের জন্য।  বোঝা গেল ইস্তারিটা ভাবি রাতে নিয়ে গিয়েছিল, ফেরত দেয়নি!  এখন ভাই-ভাবি দুজনই ঘুমাচ্ছে - রুম বন্ধ।  কি যন্ত্রণা!  আরেকটা ইস্তারি কিনে ফেললেই হয় আসলে - তাহলে আর এধরণের ঘটনা ঘটবে না।  কিন্তু আমি এটা করব না!  কেন করব না তার ভালো অনেক কারন আছে।  আমরা ৩ ভাই একসাথে থাকি মাকে সাথে নিয়ে পাশাপাশি দুটা ফ্ল্যাট এ - একান্নবর্তি পরিবার।  বোনটাকেও যদি নিয়ে আসতে পারতাম, তবে আরও ভালো হত!  যাই হউক - আমাদের এই একসাথে থাকাতেই আনন্দ - সেজন্যই আমি আরেকটা ইস্তারি কিনব না - যদি কিনি তবে এই ভাগাভাগি করার আনন্দটা আর পাওয়া যাবে না!  আজ যেমন ভাবির উপর আমার রাগ হয়েছে, তেমন আমিও আমার ভাইদের/ভাইদের বউদের/মায়ের/বউয়ের রাগের কারন হই প্রায়ই।  কাজেই এটাকে ধরার কোন প্রয়োজন আমার নেই।

আমরা একসাথে থাকি বলেই মাঝে মাঝেই ঠুকাঠুকি হয়ে যায় - এটা স্বাভাবিক!  মানুষে মানুষে ঠুকাঠুকি হবে না তো কি মানুষে আরে গরুতে ঠুকাঠুকি হবে??  কিন্তু আমরা সেইসব সাময়িক মন কষাকষিগুলোকে পাত্তা দেই না।  দুদিন ঝগড়া করে আবার ঠিকই মিলে যাই!  আমি বা আমার ছোট ভাই যদি বাসায় না থাকি আর ভালো কিছু যদি রান্না হয়ে থাকে, তবে ভাবি সে রান্নার কিছুটা চুরি করে তুলে রাখে আমাদের জন্য, মাকে জানতেও দেয় না।  আমি লিনার (আমার ছোট ভাইয়ের বউ) রান্না করা মাছ খুব পছন্দ
করি।  সেটা জানে বলে লিনাই মাছ রাঁধে বাসায়, আমার কথা চিন্তা করে।  আমি একবার অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম বেশ -  আমি তখন আমার ভাইদের অস্থিরতা দেখেছি।  এতসব ভালবাসাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আমি যখন বাসায় ফিরি - তখন দেখি আমার আর আমার ভাইদের ছেলে-মেয়েগুলো একসাথে খেলছে, আড্ডা মারছে।  প্রায় প্রতিদিনই দেখি আমার ছোট ছেলেটা তার রোদরশি আপুকে জালাচ্ছে, আফ্রিদা তার বড় কোন এক ভাইয়ের ঘাড়ে চড়ে বসে আছে।  অনেক সময় গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় চিল্লাচিল্লি শুনে - দেখা যায় আমার ভাতিজাটা চুরি করে রাতে চলে এসেছে এপাশে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখার জন্য তার চাচি আর ভাইদের সাথে - সাথে চলছে চিপ্স আর সোডার পার্টি!  আমার বউটা ফুটবল পাগল!

আমার কাছে এই দৃশ্যগুলো অনেক মুল্যবান এবং আমার ক্ষুদ্র তুচ্ছ ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা - এসবের কাছে আমি অমুল্য এই সম্পদগুলোকে বিসর্জন দিতে পারব না!  আমাদের সন্তানেরা আমাদের বৃহত্তর  স্বার্থ - তাদের সঠিকভাবে ভালবাসায় বেড়ে উঠা জরুরী, তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করতে শেখাটা একান্ত দরকার।  আমি তাদের ভালর জন্য আমার ব্যক্তিগত ছোটখাটো আবেগগুলোকে ভুলে যাব নির্দ্বিধায়!
জাতিয় পর্যায়েও এই কথা সত্য।  আমাদের মতের অমিল হবে, তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকবে - কিন্তু ন্যায় এবং নীতির জন্য, মানুষের ভালর জন্য ঐক্যবদ্ধতাই হউয়া উচিৎ আমাদের মৌলিক লক্ষ্য!