Monday, January 27, 2014

আমরা সাধারন মানুষেরা

অনেক কষ্টের এই লেখা।  কারো কারো কাছে মনে হবে ভণ্ডামি, কারো কাছে ভাব, কারো কাছে নিছক ছেলেমানুষি - কিছু আসে যায় না।  যে আমাকে যে খোলসে দেখতে চায়, সেই খোলস পরতে না পারার
কারনে অনেক ধরনের নাম কামিয়েছি - কারো কাছে আমি মুনাফিক, কারো কাছে রাজাকাড়, আরও কত কি।  আমার কিছু আসে যায় না - আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে কিছু আশা করিনা।
যাই হউক - সরকারি এক অফিসে গিয়েছিলাম কিছু পাওনা পরিশোধ করতে।  যে কোনও সরকারি অফিস গেলে আমার অস্বাস্তি লাগে খুব - অনেক পিওন থেকে শুরু করে অনেক অফিসার কেমন হুম্রি খেয়ে পরে - মক্কেল পাওয়া গেছে টাকা খাওয়ার।  এই অফিস বেতিক্রম নয়। 
দুই চারজন ডিঙ্গিয়ে গেলাম যার কাছে টাকা দিতে হবে তার কাছে।  তিনি অনেক হিসাব কিতাব করে বললেন, "আপনার যে টাকা আসে তার থেকে আমি কমায় দিলাম ২০০০, আপনে অর্ধেক নিয়েন আর আমারে অর্ধেক দিয়েন।" মন খারাপ হয়ে গেল খুব - একবার ইচ্ছা হোল বলি, "টাকা কি আপনার বাবার যে আমাকে বাচায় দিবেন?" মুখে, খুব ভদ্রতার সাথে বললাম, "ভাই, রাগ করবেন না, আমি পুরা টাকাটাই দিতে চাই,  আর আপনাকে এমনিতেই শ দুয়েক টাকা দিয়ে দিবনে।"  তিনি সেটাতে রাজি নন।  বললেন, "ভাই আপনে ভয় পান কেন?  কোন ভেজাল হইব না।"  আমি আবারও বলার চেষ্টা করলাম যে আমি পুরাটাই দিতে চাই, তিনি আমার কথায় কান না দিয়ে রিসিট কেটে ফেললেন - বুঝলাম বেশি জোর করলে একটা বিপদে ফেলে দিবে, যে বিপদের সাথে সংগ্রাম করার শক্তিসামর্থ্য আমার নেই এখন।  মেনে নিয়ে চলে এলাম!
সারা রাস্তা আমি মাথা নিচু করে বাসায় এসেছি।  আমি যে কখনো ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য হইনি আগে, তা নয়।  কিন্তু এ পরিস্থিতি ভিন্ন অনেক!  আমার মনে হোল আমি দেশটাকে ঠকালাম, তার পাওনা থেকে তাকে বঞ্চিত করলাম, আমি লুটেরা!  আমার বুক চিন চিন করছিল!  ঘেন্না লাগছিল - আমি ঠকিয়েছি। আল্লাহর কাছে মাফ চাইলাম, ঠিক করলাম যে টাকা বেঁচেছে তা আমি দরিদ্র কাওকে দিয়ে দেব। তবু কষ্টটা যায়নি।  বাসায় ভাই বোন কেও ছিলনা, বউ ও না - ইচ্ছা হচ্ছিল তাদের কাওকে ধরে হাওমাও করে কাঁদি!  ইচ্ছে ছিল কাজের জায়গায় কারো সাথে শেয়ার করব কষ্টের কথাটা - কিন্তু সে সুযোগও নিয়ে নেয়া হয়েছে আমার কাছ থেকে!
আমি এখন সবাইকে এই কষ্টের কথাটা বলছি - কারন আছে।  একটা দেশ, একটা জনগোষ্ঠী এভাবে চলতে পারেনা!
এ দেশ সত্যিকার অর্থেই লুটেরাদের হাতে! এ দেশে আমাদের সত্তিকার অর্থেই কোন স্বাধীনতা নেই!  এ দেশে কোন ন্যায় বিচার বলে কিছু নেই!  আমি মানুষকে সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে দেখি - ভিত সন্ত্রস্ত তারা!
 এখানে কোন পুলিশ আমাকে ধরে চড় থাপর মারলে আমার কিছু করার থাকবে না অপমানিত হউয়া ছাড়া।  আমাকে কেও গুম করে ফেললে আমার পরিবার শুধু কাঁদতেই পারবে!  ফুটপাতে হোন্ডা উঠিয়ে দেয়া যুবককে আমরা কিছু বলতে পারিনা ভয়ে - পাছে সে কোন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হয়!  আমাদের বাসে কে কখন বোমা মেরে বসে কে জানে!  আমাদের এখানে ৯ বছরের একটি শিশু ভোর বেলা টিফিন হাতে কাজে যায়, স্কুলে নয় - যখন আমার সন্তানরা বিকেলে খেলাধুলা করে, তখন সে কারো গাড়ি ঠিক করে, বা কোন রেস্টুরেন্ট এ ধুয়ামুছার কাজ করে!  এখানে এক বৃদ্ধার জমি দখল করে ফেলে প্রভাবশালী কোন বেক্তি - কোন বিচার হয় না!  এখানে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, বইঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হয় রাজনীতির নামে!  এখানে মসজিদ থেকে গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গা বাধান হয়, এখানে মালোপাড়ার নিরস্ত্র মানুষের জীবন তছনছ করা হয় ধর্মের নামে!  এখানে জঙ্গি দমনের নামে নিরীহ দরিদ্র একজন ধর্ম শিক্ষকের আরবি শিখানর পাঠশালা বন্ধ করে দেয়া হয়!  এখানে জামাত কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানে অত্যাচার করা হয় তাদের পরিবারের নারি/শিশুদের।  এখানে নদী দখল/বন দখল সবই চলে বিনা বাঁধায়!  পদ্মা সেতু হয়ে যায় নিছক স্বপ্ন!  এখানে অবরোধের নামে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয় এক
দশক!
আমাকে কি আরও ফিরিস্তি দিতে হবে???
সব বভক্তি ভুলে, আমাদের সাধারন মানুষদের এই ঐক্যমতে এখনি পৌঁছুতে হবে - একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না, একটি জনগোষ্ঠীর জীবন এমন হতে পারে না!  আমি কোন লুটেরা রাজনিতিবিদকে বলছি না, আমি কোন অসৎ ব্যবসায়িকে বলছি না, বলছি না দলিয়/বেক্তিগত সঙ্কীর্ণতার ওর্ধে উঠতে অক্ষম বুদ্ধিজিবিদের, বলছি না সেসব পেশাজিবিদের যারা রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে অর্থ এবং যশ কামাচ্ছেন দেদারসে!  আমি বলছি খেটে খাওয়া সাধারন মানুষদের, আমার বাসের সহযাত্রীদের - মত, ধর্ম ভুলে গিয়ে আমাদের ঐক্যমতে পৌঁছুতেই হবে এবং কাজে হাত দিতে হবে এই সমাজ ঠিক করার।
আমি হতে পারি একজন ইসলামপন্থী, আপনি সমাজতন্ত্রি, আমি হতে পারি রক্ষণশীল, আপনি উদারপন্থি, আমি হতে পারি মুসলমান, আপনি হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা নাস্তিক - এসব ভুলে যেয়ে দেশ ঠিক করার, আমাদের জীবন ফিরিয়ে নেবার কাজে ঐক্যবদ্ধ হউয়া একান্ত জরুরি হয়ে পরেছে।  পরে অনেক সময়য় পাওয়া যাবে তাত্তিক বিতর্কের, আদর্শভিত্তিক রাজনীতির।  এখন নয়! 
আমার অনেক সজনেরা/বন্ধুরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে ধিরে ধিরে, আমাকেও চাপ দেয়া হচ্ছে - কিন্তু আমি যেতে চাই না!  আর কিছু না পারি, এখানে থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করে কান ঝালাপালা করে দেব!  হারামিপনার একটা সীমা থাকা উচিৎ! 

4 comments:

  1. স্যার এখন এমন অবস্থা হযেছে যে কোন কাজ করতে হলে টাকা দিতেই হবে আগে জেনে নিতে হবে কত টাকা দিতে হবে। কেউ ভাল আছে তাকে ভাল থাকতে দিবে না।
    মানুষকে অসহায় করে রাখা প্রভাবশালীদের কাজ। কারণ অসহায় মানুষকে দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে সহজ হয়।

    ReplyDelete
  2. sir,
    amader dash e boro boro banner e likha thake "NIJE BODLAO, BAKI RA THIK E BODLABE", kintu Sir koster kotha holo amra kau kau bodlai, kintu baki kau r bodlai naa....
    boro boro banner e likha thake "JOTO DIN TOMADER HATE DESH POTH HALABE NA BANGLADESH".. kintu koster kotha holo Desh harai na....
    amader sob kisu harai jai.... :'(

    ReplyDelete
  3. স্যার ডিজিটাল বাংলাদেশ !

    ReplyDelete
  4. আমরা যারা বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী আমরা সবাই নিজের ভালোটা বুঝি আগে পরেরটা পরে। যদি এই অবস্খার পরিবর্তন করতে হয় তবে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো যার যার অবস্থান থেকে “আমি কে আমরা’য় রুপান্তর করতে হবে।” আমিত্ব ছেড়ে দিতে হবে যেভাবে ছেড়েছিলাম ৫২,৭১,৯০ এ.......তাহলে আমরা সফল হবই ইনশাআল্লাহ।

    ReplyDelete