Saturday, May 31, 2014

র‍্যাব, মানবতা এবং বাংলাদেশ - লিফট এ একদিন

হাসপাতালের লিফট এ উঠার নিয়ম হোলো যে ডাক্তার এবং নার্সরা আগে উঠবেন।  এটা স্বাভাবিক - কারণ তারা হাসপাতালটাকে চালাচ্ছেন।  আমাদের ভার্সিটি তে নিয়ম হল শিক্ষক এবং স্টাফ (যাদের সারাদিন উপর/নিচ করতে হয়) আগে উঠতে পারবেন।  আমি কিছু  বেক্তিগত কারনে এ সুবিধাটা নেই না।  একটা কারন হল - নিয়ম মানতে শেখান।  আমি যদি শিক্ষক হয়ে লাইনে দাড়াই, তবে আমার ছাত্র/ছাত্রিরা অনুপ্রানিত হবে নিয়ম মেনে চলতে।  তাই আমি আমার ছাত্রদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে লিফট এ উঠি।

সেজন্যই যখন কোনও ছাত্র/ছাত্রি উপর থেকে লিফট দখল করে উঠে, আর আমার অন্য ছাত্র/ছাত্রিরা কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে লিফট এ উঠতে না পারে, তখন খুব মেজাজ চড়ে যায়।  এমন ঘটনা প্রায় সময় ঘটে - কিন্তু আমি ছাত্রদের ভুল টা ধরিয়ে দিলে তারা মেনে নিয়ে লিফট থেকে নেমে লাইনে দাড়ায়।  কিন্তু কিছু কিছু বেতিক্রম না থাকলে ত জীবন নীরস হয়ে যায় :)
এমনই এক বেতিক্রমি ছাত্রকে তার ভুল টা ধরিয়ে দিয়েছিলাম।  ভুল স্বীকার ত দূরে থাক, সে আমাকে ইংরেজিতে বিশাল এক লেকচার দিল।  তার কথার মুল অংশগুলো নিচে তুলে ধরলাম -
১।  "আমি এখানে টাকা দিয়ে পড়ি" - মানে হল তার কোনও নিয়ম মানার, বা কাওকে শ্রদ্ধা করার কোনও প্রয়োজন নেই।
২। "আমি একজন র‍্যাব অফিসার" - সে আমাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিল।  বাংলাদেশের পরিস্থিতি সে আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
৩। "আমি মানবতা কেন দেখাব?"
আমার মন খুব খারাপ হয়েছিল সেদিন।  সে আসলেই বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।  র‍্যাব কি এখন গল্পের সেইসব দইত্য/দানব নয় যাদের ভয় দেখিয়ে বাবা/মা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ান?  এমনই কি দেখা যাচ্ছে না সাম্প্রতিক গুম/খুন/ক্রস ফায়ার এসব দেখে?  আর মানবতা কি আসলেই আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে না আমাদের মনন থেকে?  তিন বছরের বাচ্চার কিডনি দুটো কেটে নিয়ে আমরাই ত তার লাশ ফেলে রেখে যাই রাস্তায়।  আমরাই ত গুলি করে পুড়িয়ে মানুষ মারছি!
 
খুব অস্থির লাগছে।  ক্রমাগত বুঝতে পারছি, ভাল মানুষদের ঐক্য কি পরিমান প্রয়োজন এখানে!
 
কোথাও যদি গুতিকতক ভাল লোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনও কাজ করা শুরু করে, তবে তাদেরকে ঠেকানোর কেও থাকবে না।  স্রষ্টার সাহায্য সেখানে থাকবেই।  আমাদের মুল সমস্যা হল - আমরা যারা সাধারন মানুষ, সহজ সরল এবং সৎ জীবন যাপন করে যেতে চাই, তাদের ভেতর কোনও ঐক্য নেই, আর যখনই কোনও ঐক্য তৈরি হয় তাও হয় ক্ষণস্থায়ী।  এখনি সময় স্থায়ী ঐক্যের!  কদিন পর, পচন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছুবে যা চিকিৎসা করে সারান যাবেনা।  আমাদেরই লাশ ভাসতে থাকবে শীতলক্ষ্যায়, আমাদের গলিত দেহ পরে থাকবে রাস্তার পাশে, জেলের জালে ধরা পড়বে আমদের বিচ্ছিন্ন মস্তক!  আমরা কবে জেগে উঠবো? 

বিঃদ্রঃ আমার ছাত্র/ছাত্রিরা - তোমাদের কাছে ভীষণ ভাবে কৃতজ্ঞ তোমাদের ভালবাসার জন্য এবং তোমাদের সংযমের জন্য।  এই ঘটনার পর প্রচণ্ড রেগে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের সংজত করেছ তোমরা।  আল্লাহ তোমাদের ভাল রাখুক, ন্যায় প্রথিস্থার, উপকারী পরিবর্তনের সহায়ক/অগ্রদুত হিসেবে তোমাদের ঐক্যবদ্ধ করে দিক!

3 comments:

  1. জীবন থেকে নেওয়া শিক্ষাটায় বড় শিক্ষা,, সবাই সেটা নিতে পারে না :(

    ReplyDelete
  2. বিনয়কে এদেশে দুর্বলতা মনে করা হয় , বদ মেজাজকে ব্যাক্তিত্ব ভাবা হয়

    ReplyDelete
  3. ami sodo akta kota bolte chai ami kob tanda thakte valo base kinto gorom hole somosa .......................se kotha deya kotha rakeni amar phone dora nai ............ami sodo opekai ..............karap manus komotar opbabohar kore ar amar komota takar sotteo ami sedin babohar korini karon amar opor diya akta jor boye gache kono vabe nijake mante parchena .......aka aka thakteo parche na tai kal sara din raihan sir ar kacha kache chilam karon bapar ta ami onar sathe share korchi .....
    .......... kinto akon korbo insha allah ...........

    ReplyDelete