Monday, April 29, 2013
সোহেল রানা - আমাদের রাজনীতি এবং আমাদের উদাসীনতা।
টেলিভিশন দেখছি - ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা কে গ্রেফতার করা হয়েছে! পুলিশের মাঝখানে বিধ্বস্ত রানা দাড়িয়ে থাকতে পারছে না - মাঝে মাঝেই গা ছেড়ে দিয়ে পড়ে যাচ্ছে অবস্থা! খারাপ ই লাগলো - হ্যাঁ, খারাপ ই লাগলো! আমার কোন মানুষকেই বিধ্বস্ত দেখতে ভালো লাগেনা! কেন একটা মানুষ নিজেকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে যে তার সত্ত্বার অবমাননা হয় - এই প্রশ্ন তখন আমাকে যন্ত্রণা দেয়!
কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি বিচার চাই না - আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। আর নাহলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে - অন্যের জীবনের প্রতি ক্ষমতাশীলদের উদাসীনতা দূর হবে না!
তবে এখানে আরও কীছূ কথা থেকে যায় - যে নোংরা রাজনীতি সোহেল রানাদের জন্ম দেয়, তার ব্যাপারে আমরা কী করবো? যে নোংরা রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় রানারা অন্যদের জীবনকে তুচ্ছ ভাবতে শেখে - তাদের কী শাস্তি হবে? আমার পরিষ্কার মনে আছে আমাদের প্রধান মন্ত্রীর কথা - শুরুর দিকে কী ভাবে তিনি নিজের দলের লোককে বাঁচাবার জন্য রানা প্লাজার ঘটনা নিয়ে ভূল তথ্য দিয়েছিলেন মানুষকে! আর আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথা আর কী বলবো! সাভারের জঙ সাহেব যিনি রানা কে ব্যবহার করে অনেক মানুষের জমি দখল করে তাদের জীবন ধ্বংস করেছেন, তিনি তো বহাল তবীয়তে আছেন! রানারা ভূলে যায় যে যাদের ছত্রছায়ায় তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলে, তারা ই তাদের কে নিমিষে বলী দিয়ে দিবে চামড়া বাঁচাবার জন্য। সোহেল রানার জায়গা পূরণের জন্য অনেক মানুষ আছে - শূন্য স্থান পূরণে কোন সমস্যা হবেনা!
আরেকটা বিষয় হোলো - নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা বরাবর ই উদাসীন একটা জাতী। এটা অস্বীকার করা হবে মিথ্যাচারের সামিল। আমি কোণো আধুনিক এপার্টমেন্ট এ আগুন লাগলে বের হবার ঊপায় দেখি না - সবখানে দরজা একটা! আশ্চর্য! আমাদের এপার্টমেন্ট এ একটাই দরজা - তার প্রায় বিপরীতে খোলা বারান্দা ছিল। এই বারান্দা আমার খুব প্রিয় ছিল। এই খোলা বারান্দা এস এস এর গ্রিল দিয়ে বন্ধ করা হোলো চোরের ভয়ে। বারবার আমি আর আমার বড় ভাই বলেছিলাম পুরো বন্ধ না করে অন্তত একটা ছোটো জানালার মতো রাখতে যা ঈমাড়জেণশী তে বের হবার সুযোগ রেখে দেবে কিন্তু একই সাথে নিরপত্তা দেবে। কে শুনে কার কথা!
সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রতি উদাসীনতার প্রতিফলন আমি দেখি প্রতিদিন। আমরা কোন রাসায়নিক দ্রব্য যখন ব্যবহার করি, আমরা যখন বাড়ী তৈরি করি, আমরা যখন সেতু বানাই - সবকিছুতেই আমাদের এই উদাসীনতা প্রকটভাবে ধরা পরে। হাতীরঝীল এর ব্রিজ এ দাঁড়াতে আমার ভয় লাগে - রেলিঙ গুলো সব হেলানো বাইরের দিকে এবং তাদের নীচের দিকে এতো বড় ফাঁক যে বড় মানুষ ই গলে পড়ে যাবে, বাচ্চাদের কথা বাদ ই দিলাম! আমরা যখন রাস্তায় চলাফেরা করি - তখনো, অন্যের জীবনের কথা বাদ ই দিলাম, নিজের জীবনের নিরপত্যার দিকে আমাদের দৃষ্টি থাকে কম। সোহেল রানা তো এই জাতীর ই একজন! তার ই বা নিরাপত্তার প্রতি এতোটা নজর থাকবে কেন? তার উপর উনি আবার ক্ষমতাসীনদের আদরের বস্তু ছিলেন!
আমাদের জাতিগত ভাবে পরিবর্তিত হতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে! একই সাথে কঠোর ভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে যাতে নিরাপত্তার প্রতি উদাসীনতা, অন্যের জীবনের প্রতি মমত্বহীনতা দূর হয়! ছাঁদ থেকে ইট পড়ে তরুণ মারা যায়, কিন্তু কারো বিচার হয় না; ক্রেন ভেঙে শ্রমিক মারা গেলে কারো জবাব দিতে হয় না!
সময়টা খুব কষ্টের সাধারণ মানুষদের জন্য! একটী একটি মৃতদেহ বের করা হয়, খসে যায় আমাদের সত্ত্বার কীছূ অংশ! কিন্তু এরই মাঝে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে মাথা ঊচূ করে - আমরা আবেগের বসে সোহেল রানার সঠিক বিচার না চেয়ে তাকে দ্রুত ঝুলিয়ে দিতে বলবো না ফাঁসীর দড়ীতে! আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে - পৃথিবীর জঘন্যতম খূণী কেও সুযোগ দিতে হবে আত্মপক্ষ সমর্থনের এবং আইনজীবীর সাহায্যে নিজেকে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করানোর। আর নাহলে আমরা কখনো সভ্য হতে পারবো না! আর আমাদের আরও নজর রাখতে হবে যেন কোন মহল এই বিচারে বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে অপরাধীদের বাঁচাবার জন্য - তাহলে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটার মতো আমরা অপমান করবো স্বজন হারানোদের, অপমান করবো আমাদের মৃত ভাই বোনদের, আবারো পরাজিত হবো নোংরা রাজনীতির কাছে!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
স্যার, বুঝলাম সোহেল রানা দোষ করছে এবং থাকে শাস্তি দেয়ে উচিত। মনে করলাম রানার শাস্তি হলো বা হলো না। কিন্তু স্যার, আর কয়দিন দেশটা এইভাবে চলবে। লেখালেখি , মন্তব্য, আলোচনা, সমাবেশ, হরতাল, মঞ্চ, অবরোধ এই পাইন্সা কাজ কর্ম করে কি কোনো লাভ হবে বলে আপনার মনে হয়। দুইদিন পর হয়তো আপনি হবেন কোনো এক হায়ানার শিকার। স্যার, খুব কষ্ট হচ্ছে বলতে আমরা একটা অভিশপ্ত প্রজন্ম। কি শিক্ষা দিবো আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে???????
ReplyDelete---------------------------মোস্তাক মাহমুদ।
যদি সোহেল রানা এবং আর যারা অন্তত পক্ষে সরাসরি ঘটনার সাথে জড়িত তাদের শাস্তি হয় আইনি প্রক্রিয়ায়, তবে বুঝবে আশা আছে! কারন এটি হবে সবার জন্য ভালো - জবাবদিহিতা সৃষ্টির দিকে অনেক এগিয়ে যাব আমরা ইনশাআল্লাহ! আরেকটা জরুরী ব্যপার - আমরা কি সব আশা ছেড়ে চুপচাপ বসে থাকব? সেটা কি কোন পরিবর্তন আনবে? অভিশপ্ত প্রজন্ম বলে কিছু নেই:)
ReplyDeleteআমাদের বিচার সিস্টেম টাই খারাপ। আগে দুর্নীতি বাজ মন্ত্রি আমলা দের বিচার টা হামবুর্গ এ করে শুদ্ধি করে তারপর ভাল ভাল লোক গুলারে জায়গা মত বসালে কাজ একটু হবে বলে মনে হয়। হাজার বিচার হোক বিচারক গুলার ভিতর কালো বিড়াল ভাব আছে স্যার।
ReplyDelete