সাত সকালে ইস্তারিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না - মেজাজ খারাপ! একটু পরেই বের হতে হবে অফিসের জন্য। বোঝা গেল ইস্তারিটা ভাবি রাতে নিয়ে গিয়েছিল, ফেরত দেয়নি! এখন ভাই-ভাবি দুজনই ঘুমাচ্ছে - রুম বন্ধ। কি যন্ত্রণা! আরেকটা ইস্তারি কিনে ফেললেই হয় আসলে - তাহলে আর এধরণের ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু আমি এটা করব না! কেন করব না তার ভালো অনেক কারন আছে। আমরা ৩ ভাই একসাথে থাকি মাকে সাথে নিয়ে পাশাপাশি দুটা ফ্ল্যাট এ - একান্নবর্তি পরিবার। বোনটাকেও যদি নিয়ে আসতে পারতাম, তবে আরও ভালো হত! যাই হউক - আমাদের এই একসাথে থাকাতেই আনন্দ - সেজন্যই আমি আরেকটা ইস্তারি কিনব না - যদি কিনি তবে এই ভাগাভাগি করার আনন্দটা আর পাওয়া যাবে না! আজ যেমন ভাবির উপর আমার রাগ হয়েছে, তেমন আমিও আমার ভাইদের/ভাইদের বউদের/মায়ের/বউয়ের রাগের কারন হই প্রায়ই। কাজেই এটাকে ধরার কোন প্রয়োজন আমার নেই।
আমরা একসাথে থাকি বলেই মাঝে মাঝেই ঠুকাঠুকি হয়ে যায় - এটা স্বাভাবিক! মানুষে মানুষে ঠুকাঠুকি হবে না তো কি মানুষে আরে গরুতে ঠুকাঠুকি হবে?? কিন্তু আমরা সেইসব সাময়িক মন কষাকষিগুলোকে পাত্তা দেই না। দুদিন ঝগড়া করে আবার ঠিকই মিলে যাই! আমি বা আমার ছোট ভাই যদি বাসায় না থাকি আর ভালো কিছু যদি রান্না হয়ে থাকে, তবে ভাবি সে রান্নার কিছুটা চুরি করে তুলে রাখে আমাদের জন্য, মাকে জানতেও দেয় না। আমি লিনার (আমার ছোট ভাইয়ের বউ) রান্না করা মাছ খুব পছন্দ
করি। সেটা জানে বলে লিনাই মাছ রাঁধে বাসায়, আমার কথা চিন্তা করে। আমি একবার অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম বেশ - আমি তখন আমার ভাইদের অস্থিরতা দেখেছি। এতসব ভালবাসাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমি যখন বাসায় ফিরি - তখন দেখি আমার আর আমার ভাইদের ছেলে-মেয়েগুলো একসাথে খেলছে, আড্ডা মারছে। প্রায় প্রতিদিনই দেখি আমার ছোট ছেলেটা তার রোদরশি আপুকে জালাচ্ছে, আফ্রিদা তার বড় কোন এক ভাইয়ের ঘাড়ে চড়ে বসে আছে। অনেক সময় গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় চিল্লাচিল্লি শুনে - দেখা যায় আমার ভাতিজাটা চুরি করে রাতে চলে এসেছে এপাশে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখার জন্য তার চাচি আর ভাইদের সাথে - সাথে চলছে চিপ্স আর সোডার পার্টি! আমার বউটা ফুটবল পাগল!
আমার কাছে এই দৃশ্যগুলো অনেক মুল্যবান এবং আমার ক্ষুদ্র তুচ্ছ ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা - এসবের কাছে আমি অমুল্য এই সম্পদগুলোকে বিসর্জন দিতে পারব না! আমাদের সন্তানেরা আমাদের বৃহত্তর স্বার্থ - তাদের সঠিকভাবে ভালবাসায় বেড়ে উঠা জরুরী, তাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করতে শেখাটা একান্ত দরকার। আমি তাদের ভালর জন্য আমার ব্যক্তিগত ছোটখাটো আবেগগুলোকে ভুলে যাব নির্দ্বিধায়!
জাতিয় পর্যায়েও এই কথা সত্য। আমাদের মতের অমিল হবে, তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকবে - কিন্তু ন্যায় এবং নীতির জন্য, মানুষের ভালর জন্য ঐক্যবদ্ধতাই হউয়া উচিৎ আমাদের মৌলিক লক্ষ্য!