গা ছমছম করা কিছু নির্জন দুপুর আছে আমার স্মৃতিতে। অনেক আগে আমার শৈশবে/কৈশোরে, খোলা জায়গা ছিল অনেক, প্রচুর গাছগাছালিও ছিল। নিরিবিলি সে সময় সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমাত কিছুক্ষণ। সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত, আমি একা মেতে উঠতাম খেলায়।
এমনি এক দুপুরে, খুব সম্ভবত সিঁড়িতে বসে, গভীর মনোযোগ দিয়ে ফাঁদ পেতে চড়ুই ধরতে চেষ্টা করছিলাম, ভেঁজে খাব বলে। চারদিকে সব সুনসান। হঠাৎ ঘাড়ের লোমগুলো সব দাঁড়িয়ে গেল, মেরুদণ্ড বেয়ে মনে হল নেমে যাচ্ছে একটা ঠাণ্ডা সরীসৃপ! কেও একজন আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে। ভয়ে জমে গেছি - ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর দুঃসাহস হচ্ছে না আমার! কতটা সময় চলে গিয়েছিল জানিনা! শুধু জানি, একটু শক্তি ফিরে পেতেই ঝট করে ঘাড় ঘুরিয়েছিলাম, কিন্তু পেছনে কেও নেই! তবু কেন জানি মনে হচ্ছিল, কেও একজন ওত পেতে আছে আমাকে মারবে বলে। একছুটে দৌড়ে ঘরের ভেতর - হৃৎপিণ্ড কত সময় নিয়েছিল স্বাভাবিক হতে, তা মনে নেই!
নির্জন এমন দুপুরের কথা এখন খুব মনে হয় এবং খুব আফসোস হয়! অদ্ভুত শুনাবে, কিন্তু আফসোসটা আমার সন্তানদের জন্য! আমি কায়মনোবাক্যে তাদের জীবনে এমন ভয়ঙ্কর দুপুর প্রার্থনা করি! কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা তাদের হবে বলে মনে হয় না! তাদের জীবনে নিঝুম দুপুর বলে কিছু নেই! মানুষের ভিড়ে বিলিন হয়ে গেছে গাছপালা - চড়ুইরা সব মরে ভুত হয়ে গেছে অনেক আগে! খোলা জায়গা আবার কি জিনিস ঢাকা শহরে!
আমার সন্তানরা ফাঁদ পেতে চড়ুই ধরার খেলা খেলতে পারবে না কখনো - কখনো সফল হইনি চড়ুই ধরায়, কিন্তু ধরার চেষ্টার যে আনন্দ তা বলে বুঝান যাবেনা! আমার সন্তানরা কোনদিন এই আনন্দের সাথে পরিচিত হবে না! তারা ছাদকে মনে করে খলার মাঠ! আমাদের মত বৃষ্টিতে, কাদা পানিতে ফুটবল খেলার মজা তারা কখনো পাবেনা।
আমাদের ছোটবেলায় পাড়ার সব বারিঘরে ছিল আমাদের অবাধ যাতায়াত - খেলতে খেলতে যখন তৃষ্ণা পেত, সবচে কাছের বাড়ীটাতে ঢুকে বলতাম, "খালাম্মা, পানি দেন না একটু!" আমার সন্তানরা দৌড় দিয়ে কখনো চলে যেতে পারবেনা অন্যের বাড়িতে - এখন অনেক ধরনের বাঁধা ব্বিপত্তি, অনেক ধরনের সব দেয়াল!
অনেক পরিবর্তিত হয়েছে আমাদের বেশবাস - কিন্তু এই পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছিনা! শুধুই কষ্ট হচ্ছে!